গোলাম কিবরিয়া পলাশ, ময়মনসিংহঃ
নেত্রকোনা-৩ আসনের সাংসদ অসীম কুমার উকিল ঐচ্ছিক তহবিলের বরাদ্দের টাকা কেন্দুয়া নিজ বাস ভবনে বিতরণ করা হয় সম্প্রতি।
বিতরণের সংবাদ ফেইসবুকে প্রকাশ পাওয়ার সাথে সাথে কেন্দুয়া উপজেলার কয়েকজন প্রতিবাদী কন্ঠস্বর হলি খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, চিরাং ইউনিয়ন আওয়ামিলীগ, কেন্দুয়া ; মানবাধিকার সংস্থা বাংলাদেশ আইন সহায়তা কেন্দ্র – বাসক এর কেন্দুয়া উপজেলা শাখার সভাপতি শাহ আলী তৌফিক রিপন; সাংবাদিক মাঈন উদ্দীন রয়েল; আয়নাল হক; মোঃ রুকন উদ্দিন ফেইসবুকে পোস্ট করে প্রতিবাদ করেন।
প্রতিবাদের মূল কারণটি বিশ্লেষন করলে দেখা যায় যে, কেন্দুয়া উপজেলাতে অসংখ্য অসহায় ব্যক্তি থাকার পরেও যেসব সমাজে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের মাঝে ঐচ্ছিক তহবিলের দশ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক।
ঐচ্ছিক তহবিলের টাকা প্রাপ্ত ব্যক্তি বর্গের মধ্যে রয়েছেন পরিবেশ অধিদপ্তর হতে সদ্য ১ম শ্রেণীর সরকারি চাকরি হতে অবসর প্রাপ্ত অর্থাৎ বর্তমানে পিআরএলে থাকা আয়েশ উদ্দীন ভূইয়া ; মোঃ লুৎফর রহমান প্রভাষক গন্ডা ডিগ্রী কলেজ ; আশরাফুল হক ভূঞা গোলাপ প্রভাষক গন্ডা ডিগ্রী কলেজ; শেখ কামাল প্রভাষক গন্ডা ডিগ্রী কলেজ; আনোয়ার উদ্দিন হিরন আইসিটি শিক্ষক, নওপাড়া উচ্চ বিদ্দ্যালয় প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ।
এই নাম গুলো দেখার পর কি মনে হচ্ছে, কেন্দুয়ার অধিকাংশ মানুষ এতটাই বিত্তবান যে দারিদ্র্য ব্যক্তি খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়ে পিআরএলে থাকা একজন সরকারি চাকুরীজীবিকেও ঐচ্ছিক তহবিলের টাকা প্রদান করা হয়েছে। এটা এলাকার সচেতন মানুষের জন্য অত্যন্ত লজ্জার বিষয়।
এছাড়াও কেন্দুয়া পৌর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ইয়াসিন আলম সোহাগের নেতৃত্বে সম্পদশালী পরিবারের সন্তান হওয়ার পরেও ছাত্রলীগের মোঃ শামীম ভূঞা, মোজাম্মেল হক, মোঃ মেহেদী হাসান চৌধুরী কে ঐচ্ছিক তহবিলের টাকা প্রদান করা হয়েছে। ছাত্রলীগ ছাড়াও আর্থিকভাবে সচ্ছ¡ল হয়েও তহবিলের টাকা গ্রহন করেছেন কেন্দুয়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক বাপ্পি খন্দকারও । ছাত্রলীগ এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের অসচ্ছল কর্মীদের বাদ দিয়ে পৌর ছাত্রলীগের আহ্বায়কসহ ধনাঢ্য পরিবারের ছেলেদের দশ হাজার টাকা দেয়া কতটুকু যৌক্তিক।
এ ব্যাপারে বর্তমানে পিআরএলে থাকা আয়েশ উদ্দীন ভূইয়াকে বেশ কয়েকবার মোবাইলে ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি।বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের হিসাব শাখা-২ এর একটি পরিপত্রের মাধ্যমে গত ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ সালে মাননীয় সংসদ সদস্যগণের অনুকূলে মঞ্জুরীকৃত ঐচ্ছিক তহবিল হতে ব্যয় বরাদ্দ সংক্রান্ত নীতিমালা প্রকাশ করা হয়। উক্ত পরিপত্রের মাধ্যমে সাংসদগণ বার্ষিক একটা আর্থিক বরাদ্দ পান যার মাধ্যমে প্রাপ্ত টাকা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে প্রদান করা যাবে।
উক্ত পরিপত্রে কোন শ্রেনীর ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিতরণ করা যাবে তা উল্লেখ না থাকলেও বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার কথা চিন্তা করে ঐচ্ছিক তহবিলের মাধ্যমে দশ হাজার টাকার প্রাপ্তির উপযুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান খুঁজে বের করা কি খুব বেশি কঠিন। ইউক্রেন যুদ্ধ পরবর্তী সার্বিক পরিস্থিতি খারাপ থাকলেও বঙ্গবন্ধু কণ্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব গুণে বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি যথেষ্ট ভালো।
সার্বিক বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় গত রমজানে দলীয় সকল ইফতার পার্টি আয়োজনের পরিবর্তে গরীব দুস্থ মানুষের মাঝে ইফতার সামগ্রীসহ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার জন্য বলেছিলেন বঙ্গবন্ধু কণ্যা। এমতাবস্থায় একজন সাংসদের ঐচ্ছিক তহবিলের বরাদ্দের টাকা বিতরণের তালিকা প্রস্তুতির সময় সচেতন হওয়া উচিত।