নিজস্ব প্রতিনিধি: পবা সাব রেজিস্ট্রারের মৌখিক চুক্তিতে নিয়োগ পেয়ে রনি-নাদিম সিন্ডিকেট গড়েছেন অনিয়ম দূর্নীতি আখড়া। বহু পত্র পত্রিকায় এদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ হলেও অজ্ঞাত কারণে এখনো বহালতবিয়তে কাজ করছে সিন্ডিকেটটি। সিন্ডিকেটটি মুলহোতা খোদ সাব রেজিস্ট্রার। তাঁর অলিখিত নিয়োগে অফিসের সব দ্বায়িত্ব নিয়েছেন রনি-নাদিম সিন্ডিকেট। এতে দীর্ঘদিন থেকে নিরাপত্তাহীনতায় পবা সাব রেজিস্ট্রার অফিস। সরকারি এই অফিসটি গুরুত্বপূর্ণ ফাইলপত্রসহ কাগজপত্র বেহাত হওয়া আশংকায় রয়েছে। ইতিমধ্যে অফিসের অনেক গোপন নথি ও তথ্য পবা সাব রেজিস্ট্রার অফিসের জালিয়াতি সিন্ডিকেটের কাছে হস্তান্তর করেছেন একটি নিয়োগহীন চক্র । ২০১৩ সালের নৈশ প্রহরী কবিরুলের ন্যায় আবারও উত্থান হয়েছে রনি নামে ওই নিয়োগহীন অফিস প্রধান।
নিয়োগহীন রনি’র মতো অফিস প্রধানরা দীর্ঘ সময় থেকে আগলে রেখেছেন অফিসটি। অস্থায়ী অফিস প্রধানরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অনিয়ম দূর্নীতির ঘটনা জন্ম দিলেও কোনোভাবে যেনো তা থামছে না। একের পর এক অনিয়ম দূর্নীতির ঘটনা ঘটলেও দুর্ভাগা সাব রেজিস্ট্রার অফিস বা সেবা গ্রহীতাদের ভাগ্য কখনো খোলেনি। ভাগ্য না খুললেও বেড়েছে জনভোগান্তি। সেবাগ্রহীতার ভাগ্য না খুললেও অফিসে কর্মরতদের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে। গড়েছেন টাকার পাহাড়। আবার অনেকেই পবা সাব রেজিস্ট্রার অফিসে দুর্নীতি করে বরখাস্ত হয়েছেন৷ কেউ কেউ গিয়েছেন জেলখানায়, আবার কারো কারো নামে দুদকে তদন্ত চলমান। এতো কিছুর পরেও থামছে না এই পবা সাব রেজিস্ট্রার অফিসে অনিয়ম দূর্নীতি। অতিরিক্ত চলতি দ্বায়িত্বে থাকা জেলা রেজিস্ট্রারকে ম্যানেজ করেই চলে এমন অনিয়ম দূর্নীতি। এবার তো সর্বকালের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়ে তিন রত্ন গড়েছে দূর্নীতির স্বর্গরাজ্য। ওই তিন রত্নের প্রধান রনি। বাকী দুজন হলেন মামুন ও নকল নবীশ নাদিম। নকল নবীশ নাদিম অফিসের স্টাফ হলেও মামুন আর রনি ওই অফিসের কাগজ কলমে কেউ না। তবে কাগজ কলমে কেউ না হলেও অফিসের চেয়ার টেবিলে বসে কাজ করেন। করেন সম্পুর্ন অফিস নিয়ন্ত্রণ। সাব-রেজিষ্টার অফিসের রেজিষ্ট্রিকৃত দলিলের হিসেব-নিকাশ, সরকারি পে-অর্ডার ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নথিসমূহের কাজ করেন তারা। এমনকি সম্পূর্ণ অফিসের নিরাপত্তাসহ অফিসের চাবিও থাকে তাদের নিকট। রনি’ নিজেকে অফিস স্টাফ বা পেশকার পরিচয় দিয়ে থাকেন। বসেন পেশকারের পাশেই, সাব রেজিস্ট্রারের সামনেই। রনি ও মামুনের অফিশিয়াল কোনো নিয়োগ না থাকলেও তারাই মূলত সাব রেজিস্ট্রার অফিসের সব। তাদের কথায় চলে সাব রেজিস্ট্রার অফিস। ভুক্তভোগীরা সেবা নিতে এসে এদের হয়রানিসহ অর্থ লোপাটের খপ্পরে পড়েন। রেজিষ্ট্রি করতে প্রতিটি দলিলে আগে ১ হাজার ঘুষ লাগতো। এবার গোদাগাড়ীর খণ্ডকালীন দ্বায়িত্বে আসা সাব রেজিস্ট্রারের জন্য অতিরিক্ত আরো ২০০ টাকা নিচ্ছেন রনি সিন্ডিকেট। এটা রনি সিন্ডিকেটের অলিখিত আইন। আইনের মূলহোতা রনি প্রকাশেই এই ঘুষ বানিজ্যে করেন। অন্যথায় রেজিষ্ট্রি হবে না। ২০০ টাকা অতিরিক্ত দিতে হবে মর্মে জেলা সাব রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দ্বায়িত্বে) সফিকুল ইসলামের নাম ভাঙ্গায় রনি। রনি’র কাছে অফিসের চাবি থাকায় অফিসের অনেক গোপন তথ্য সে বাসায় নিয়ে যায়। সেটা তিনি বিভিন্নজনকে সরবরাহ করে অবৈধ ফায়দা হাসিল করেন। চাবি থাকায় দলিল পত্রের যা ইচ্ছে তাই করার ক্ষমতা আছে তার। ইতোমধ্যে অফিসে অনেক গোপন তথ্য সে পবার অনেককে সরবরাহ করেছেন। বন্টন দলিল মানে মোটা অংকের ব্যবসা । ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা দাবি করেন তারা। অন্যথায় রেজিষ্ট্রি হয় না। অবৈধ ফায়দা হাসিল করে দেয় বলেই এদের কথায় উঠবস করেন সাব রেজিস্ট্রাররা। রনি’র কোনো নিয়োগ না থাকলেও অফিসের গোপন তথ্য দিয়ে ফায়দা হাসিল করছেন। যেসব কারণে এর আগে রিটু ও সেলিম পেশকার বরখাস্ত হয়েছিলেন ওই কাজে রনিও জড়িত ছিলো। রিটু ও সেলিম পেশকার বরখাস্ত হলেও এখন বহালতবিয়তে রনি গং। এই রনি’র উত্থানটা যেনো আলাউদ্দিনের চেরাগের মতো। বাবাহীন রনি মায়ের কাছেই মানুষ। অফিসে মায়ের রান্না করে দেওয়ার বদৌলতে অফিসে উঠাবসা রনির। সেখান থেকে যাত্রা শুরু করে ম্যানেজ মাস্টার অতি চালাক এই রনি গড়ে তুলেন শক্তিশালী সিন্ডিকেট। মামুন ও নকল নবীশ নাদিম ও নাসরিনকে হাতে নিয়ে গড়ে তুলেছেন দূর্নীতির স্বর্গরাজ্য। হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। শূন্য হাতে জীবন যাত্রা শুরু করা রনি এখন বহু টাকার মালিক। ৫ লক্ষ টাকা মূল্যের মোটরসাইকেল, ৮০ হাজার টাকা মূল্যের মোবাইল ব্যবহার করেন তিনি। সাব রেজিস্ট্রার আয়েশা’র বিশ্বাস্ত হাতিয়ার সে। ম্যানেজ মাস্টার রনি এখন খণ্ডকালীন দ্বায়িত্বে আসা সাদেকুর রহমানের ঘুষ বানিজ্যের সফর সঙ্গি। অফিসে অবৈধ লেনদেনের ঘুষের টাকা রনি সবাইকে ভাগ করে দেন।
কথা বলললে পবা সাব রেজিস্ট্রার অফিস আসা কয়েকজন প্রতিবেদককে বলেন, রনি, মামুন, নাদিম, নাসরিন এই অফিসের স্বর্বসর্বা। বন্টন নামা, নকল উত্তোলন, দলিল রেজিষ্ট্রি করতে মোটা অংকের উৎকোচ চান তারা।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে অফিসের কয়েকজন বলেন, নিয়োগহীন একজন অল্প বয়সের ছেলেকে অফিস কি কারণে চাবি দিয়ে রাখেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। বড় কোনো ক্ষতি হলে এর দায়ভার কে নিবে? শোনা যাচ্ছে ইতোমধ্যে দলিল লুকিয়ে রেখে হয়রানিসহ বালাম বইয়ের রেকর্ড পাচার করছেন তিনি।
স্থানীয়রা জানান, রনি বাবা বেঁচে নেই। অল্পদিনে সে অনেক টাকার মালিক। বোনের বিয়েতে খরচ করেছেন অনেক টাকা। জামাইকে দিয়েছেন ৫ লাখ টাকা মূল্যের গাড়ি।
সরেজমিনে প্রতিবেদক সেবাগ্রহীতা সেজে গিয়ে কথা বলেন, রনি ও মামুনের সঙ্গে। সততা মিলে উল্লেখিত ঘটনার। প্রতিবেদকের নিকটই ঘুষ দাবিসহ অবৈধ প্রস্তাব দেন তারা।
এর আগে নিয়োগহীন পবা সাব রেজিস্ট্রার অফিসের প্রধান রনি প্রতিবেদককে জানায়, আমি মাস্টাররুলে অফিস সহায়ক হিসেবে আছি। আমার কোনো লিখিত নিয়োগ নাই। সার রেজিস্ট্রার স্যাররা ভালোবেসে মৌখিকভাবে রেখেছেন। সেসময় তিনি অন্যান্য অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন। এবার তাকে ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে তার বিরুদ্ধে হওয়া সংবাদের প্রতিবাদ দিয়েই নাকি তিনি আবারও অফিস করছেন।
এ ব্যাপারে পবা সাব রেজিস্ট্রার সাদেক
মঙ্গলবার, ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -|- ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-শীতকাল -|- ২২শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি