আবুল হাশেম,স্টাফ রিপোর্টারঃ
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান যুবলীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর আলমের জিশান এন্টারপ্রাইজ নামে তিনটি প্রতিষ্ঠানে শ্রম আইন বাস্তবায়নে বাঁধা সৃষ্টি ও শ্রম আইন বাস্তবায়নকারী পরিদর্শকের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করার অভিযোগ উঠেছে। ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদ সরকার পতনের পর জিশান এন্টারপ্রাইজের মালিক জাহাঙ্গীর আলম পলাতক হলেও তাঁর ম্যানেজার হিমেল সরকারী কর্মকর্তাদের ফাঁসাতে অভিনব কৌশল অবলম্বন করেন। এতোদিন ক্ষমতার দাপটে শ্রম আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রাজশাহী নগরীর থিম ওমর প্লাজায় এপেক্সের ডিলারশীপ, সাহেব বাজারের জুতার দোকান ও ফ্যাশন হাউজে কোনো প্রকার শ্রম আইন বাস্তবায়ন করা হয়নি। উক্ত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার শ্রম আইন ২০০৬ এবং বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা ২০১৫ এর ৩৫৪ ও ৩৫৫ ধারা লঙ্ঘন করা হচ্ছে। বিধি মোতাবেক প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক নিয়োজিত না থাকলেও লাইসেন্স গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক। আ’লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরও প্রতিষ্ঠানটি ম্যানেজার হিমেল প্রভাব বিস্তার করে শ্রম আইন লঙ্ঘন করে এখনো প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন। এ অবস্থায় রাজশাহী কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পরিদর্শক আজহারুল ইসলাম তাঁদের আইনি নোটিশ প্রদান করলে তাঁকে ফাঁসাতে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও অপপ্রচার করাচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার হিমেল। এঁদেরকে সহায়তা করছেন কতিপয় দুষ্কৃতকারী।
অভিযোগ উঠেছে, আইনি নোটিশ পাওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক হিমেল কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পরিদর্শক আজহারুল ইসলামের নিকট লাইসেন্স বিষয়ে পরামর্শ নিতে যান। অফিসে বসেই তিনি তাঁদের সঙ্গে কথা বার্তা ও কি কাগজপত্র লাগবে তা বুঝিয়ে দেন। এরপরই তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ বানিজ্যের অভিযোগ তোলেন। সে অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার করে সম্মানহানির চেষ্টায় চালানো হচ্ছে।
এ বিষয়ে শ্রম পরিদর্শক আজহারুল ইসলাম বলেন, গত ১৪ অক্টোবর লাইসেন্স গ্রহণের জন্য জিশান এন্টারপ্রাইজকে দুটি নোটিশ প্রদান করা হয়। তাঁর প্রতিষ্ঠানে মহিলা ও পুরুষ উভয় শ্রমিক কাজ করেন। এজন্য তাঁর শ্রম আইন অনুযায়ী লাইসেন্স গ্রহণ ও বিধিমালা বাস্তবায়ন করা জরুরি। এর আগে উক্ত প্রতিষ্ঠানে ক্ষমতার বলে শ্রম আইন বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হয়নি। এখন আবারও ম্যানেজার হিমেল প্রভাব বিস্তার করে কিছু দুষ্কৃতকারীকে আমার পিছনে লাগিয়ে মিথ্যাচার করছেন। যদিও আমি বিষয় আমার উদ্ধর্তন কর্মকর্তাদের জানিয়ে রেখেছি, তদুপরি আমিও আইনগতভাবে বিষয়টি মোকাবিলা করবো। লাইসেন্স তাঁদের নিতে হবে। কারণ এটা সরকারি আইন। আইনের বলেই তাকে লাইসেন্স নিতে হবে। কোনো প্রকার অপতৎপরতা কাজে বাধা সৃষ্টি করতে পারবে না।
জানতে চাইলে রাজশাহী কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শ্রম আইন বাস্তবায়নে মালিক পক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে। সবাই এগিয়ে আসে, কিছু তো ক্ষমতা দেখায়। তবে আইন বাস্তবায়নে কোনো ক্ষমতা বা অপপ্রচার করে লাভ হবে না। শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের আইন বাস্তবায়নে আইনিভাবে এগিয়ে সকল বিষয় মোকাবিলা করা হবে।
কথা বলতে জিশান এন্টারপ্রাইজের মালিক গোদাগাড়ী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান যুবলীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর আলমে একাধিকবার ফোন দিলেও তাঁর ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। তাই তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে তাঁর ম্যানেজার হিমেলকেও ফোনে পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, জিশান এন্টারপ্রাইজের তিনটি প্রতিষ্ঠান সকাল ৯টা থেকে রাত ১০ পর্যন্ত শ্রমিকারা কাজ করেন। শ্রমিকদের নিয়োগপত্র, পরিচয় পত্র, শ্রমিক রেজিস্ট্রার, সার্ভিস রেজিস্ট্রার, মঞ্জুরি রেজিস্ট্রার, দূর্ঘটনা রেজিস্ট্রারসহ শ্রম আইনের বিধিনিষেধের বালাই নাই। লঙ্ঘিত হচ্ছে শ্রমিকদের অধিকার। এজন্য কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর একাধিকবার নোটিশ করলেও তাঁরা সরকারী পত্রের জবাব দেয়নি। বরং ম্যানেজার পরিদর্শক আজহারুল ইসলামকে ফাঁসাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন বলে অভিযোগ খোদ পরিদর্শকের।