আসিফ জামান, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ
এখন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনেও জনগণ ভোট দিতে পারে না অভিযোগ তুলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীদের কৌশল করে হারিয়ে দেয়া হয়। হারিয়ে দেয়া নির্বাচনে বিএনপি আর যাবে না।
ভোট কারচুপি প্রতিরোধে প্রচলিত প্রবাদের সুরে বিএনপির মহাসচিব বলেন, বারবার ঘুঘু তুমি খেয়ে গেছ ধান, এবারের নির্বাচনে ঘুঘুকে আর ধানখেতে দেয়া হবে না।
শনিবার বেলা ১১টার দিকে ঠাকুরগাঁও শহরে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে শীতবস্ত্র বিতরণের আগে বক্তব্যে ফখরুল এসব কথা বলেন।
বিএনপির এ নেতা বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি, ২০১৮ সালের নির্বাচনে আগের রাতেই ভোট হয়েছে। এবার তা হবে না। আগে যেমন কেয়ারটেকার (তত্ত্বাবধায়ক) সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতো, জনগণ তার নিজের ভোট নিজে দিত, এবার তেমন নির্বাচন দিতে হবে।
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ার সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, এই মেশিনে ধানের শীষে ভোট দিলে নৌকায় চলে যাবে। ইভিএমে ভোট দেয়ার পর ভোটারকে একটি পেপার দেয়া হয় যে আপনি কোথায় ভোট দিলেন তার একটা ডকুমেন্ট। ভারতে এটা দেয়া হয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশেও দেয়া হয়। শুধু এখানেই দেয়া হয় না। আমরা এবার এটা করতে দেব না। পরিষ্কার কথা, সসম্মানে বিদায় হন। (নির্বাচন আয়োজনে) একটা কেয়ারটেকার সরকার দেন।
নিত্যপণ্য, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, শীতে এমনিতে মানুষ ভালো নেই। মানুষ দুবেলা ঠিকমতো খেতে পারেন না। এর মধ্যে নিত্যপণ্য, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে সরকার।
১৪ বছর ধরে আওয়ামী লীগ উন্নয়নের কথা বলে জনগণকে বোকা বানাচ্ছে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এ সরকার দেশটাকে আওয়ামী লীগের দেশ বানাতে চায়। সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললেই মামলা-হামলা করা হচ্ছে। পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের গণতন্ত্র লুট করার গণতন্ত্র।
আমরা এমন দেশের জন্য ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করিনি। কেন যুদ্ধ করেছিলাম? পাকিস্তান আমাদের শোষণ করত, দেশটাকে লুটে নিয়ে যেত, এখন সেটাই হচ্ছে। সারা দেশের চিত্র একটাই, আওয়ামী লীগের নেতারা লুট করে ফুলে-ফেঁপে বড়লোক হচ্ছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন নিয়ে ইতরামি আর চলবে না, আমরা জনগণকে নিয়ে এবং সব রাজনৈতিক দল নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন করছি। আমরা যদি এ আন্দোলনে জয়লাভ করতে পারি, তাহলে একটি জাতীয় সরকার গঠন হবে। ওই জাতীয় সরকারে সব দলের প্রতিনিধি থাকবে, যারা আন্দোলনে থাকবে। আর সেখানে আমরা ২৭টি প্রস্তাব দিয়েছি। এগুলো আমরা বাস্তবায়ন করতে চাই।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, যারা গরিব থেকে আরও গরিব হচ্ছেন, এ গরিবী দূর করার জন্য আমরা প্রকল্প নেব, যারা চুরি করে দুর্নীতি করে, লুট করে টাকা পাচার করে দিচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করে একটা কমিশন গঠন করব। বিচার বিভাগের নৈরাজ্য দূর করে মানুষ যেন ন্যায়বিচার পায় এর জন্য কমিশন গঠন করার কথা বলেছি। প্রধানমন্ত্রীর যে অফুরন্ত ক্ষমতা, এ ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। আমরা বলেছি একজন ব্যক্তি (প্রধানমন্ত্রী পদে) পরপর দুইবার নির্বাচন করতে পারবে না। রাষ্ট্রপতি পরপর দুইবারের বেশি হতে পারবেন না।
এ সময় জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমিনসহ দলীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। পরে কিছু শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করেন ফখরুলসহ অতিথিরা।
আসিফ জামান
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
তারিখঃ ২১/১/২০২৩ ইং