নিজস্ব প্রতিনিধিঃ-
বন্দরে র্যাব-৪ কর্তৃক একটি কভার্ড ভ্যানে তল্লাশী চালিয়ে ৫ কোটি টাকা মূল্যের গার্মেন্টস পন্যসহ চোরাকারবারি দলের ৭ সদস্যকে গ্রেপ্তার করলেও চোরাকারবারি চক্রের মূল হোতা আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হাসনাত জনি ও তার অন্যতম সহযোগী হিমেল, রিয়াজুল গং পলাতক রয়েছেন।
শনিবার (২৮ জানুয়ারী) ভোর সাড়ে ৫টায় বন্দর উপজেলার লাঙ্গলবন্ধ চিড়াইপাড়াস্থ দক্ষিন পশ্চিম কণার্রে মঞ্জুর হোসেন জিকুর টিনসেড গুদাম ঘরের ভিতর থেকে উক্ত কভার্ড ভ্যানটি জব্দসহ এদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে গত ২৫ জানুয়ারী ঢাকা গাজীপুর থেকে চট্রগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে ওই কভার্ড ব্যান ভর্তি ৫ কোটি টাকা মূল্যে গার্মেন্টস পন্য চুরি ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে জে.এম. ফেব্রিকস লিমিটেড এর উপ-ব্যবস্থাপক (অর্থ ও হিসাব) মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম বাদী হয়ে গ্রেপ্তারকৃত ৭ চোরাকারবারিসহ অজ্ঞাত নামা ৪/৫ জনের নাম উল্লেখ্য করে বন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং- ৪০(১)২৩ ধারা- ৪০৭/ ৪১১/৩৪ পেনাল কোড- ১৮৬০। গ্রেপ্তারকৃত চোরাকারবারিরা হলো সুদূর পটুয়াখালী জেলার একই থানার দূগার্পুর জেলার আব্দুল জাব্বার মিয়ার ছেলে রিপন হোসেন ওরফে ছোট রিপন (৪৩) মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া থানার ভিটিকান্দী এলাকার মৃত আলাই মিয়ার ছেলে বিল্লাল হোসেন ওরফে ছোট বিল্লাল (৩৫) শরীয়তপুর জেলার সখিপুর থানার গনিমোল্লাকান্দি এলাকার শাহ জাহান চৌধুরী ছেলে নাঈম ইসলাম (২৭) একই জেরার গোসাইর হাট থানার বালুরচর বাজার এলাকার আব্দুল মোতালেব মিয়ার ছেলে আকাশ (২৬) ভোলা জেলার চর ফ্যাশন থানার মোস্তফা মাঝি ছেলে সুমন (৩০) ভোলা জেলার বোরহান উদ্দিন থানার বাটামারা এলাকার মৃত কাজল মিয়ার ছেলে ফরিদ (৩৮) ও বন্দর থানার যুগিপাড়া এলাকার মৃত জয়নাল আবেদীন মিয়ার ছেলে মঞ্জুর হোসেন জিকু (৩৮)। গ্রেপ্তারকৃতদের ৭ চোরকারবারিকে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে আদালতে প্রেরণ করলে বিজ্ঞ আদালত ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মামলার তথ্য সূত্রে জানা ঘেছে, দীর্ঘ দিন ধরে জে.এম. ফেব্রিকস লিমিটেড প্রতিষ্ঠানের টি-শার্ট, পলো শার্ট,লেডিস আইটেম, কিডস আইটেমসহ আরো বিভিন্ন আইটেমের গার্মেন্টর্স সামগ্রী উৎপাদন হয় আমাদের প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত গার্মেন্টর্স পন্য স্পেন, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, জামার্নী, সুইডেন, লন্ডন, তুরস্ক ও আমেরিকা ও বেলজিয়ামসহ বিভিন্ন দেশে চট্রগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে রপ্তানি করা হয়। বেশ কিছুদিন যাবৎ চট্রগ্রাম বন্দরে থাকা রপ্তানী কাজে নিয়োজিত আমাদের প্রতিষ্ঠানের টিম কর্তৃপক্ষ অভিযোগ পাই যে আমাদের প্রতিষ্ঠান কতৃক প্রেরিত কাটুর্নে পোষাকের পরিমান ও ওজন কমে যাচ্ছে। এ কারনে আমাদের প্রতিষ্ঠানটি আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের কর্মকতার্দের সন্দেহ হয় মালামালগুলো রপ্তানী জন্য চট্রগ্রাম বন্দরে প্রেরনের সময় পথের মধ্যে কোথাও জেন উক্ত পন্য সামগ্রী গায়েব করা হচ্ছে। সে কারনে মূল রহস্য উদঘাটন করার জন্য গোপনীয় ভাবে নজরদারী শুরু করি। এর ধারাবাহিকতায় গত ২৫ জানুয়ারী বিকেল ৫টায় বেলজিয়ামে রপ্তানী করার জন্য ঢাকা মেট্রো ট ১৩- ৪০৯৭ কভার্ড ব্যানে মাধ্যমে ৫৭২ কার্টুন রক্ষিত বিভিন্ন কালারে ২৫ হাজার ৯’শ ৫০ পিছ লেগিন্স টাইপের গার্মেন্টস পন্য রপ্তানী জন্য গাজীপুর প্রতিষ্ঠান হইতে চট্রগ্রামের উদ্দেশ্যে প্রেরণ করি যার মূল্য ৫ কোটি টাকা। প্রেরনকৃত কভার্ড ভ্যানটি যথা সময়ে চট্রগ্রামে বন্দরে না যাওয়ায় বিষয়টি আমি কর্তৃপক্ষকে অবগত করে কভার্ড ব্যানটি খোঁজাখুজি শুরু করি। পরবর্তিতে র্যাব-৪ এর একটি চৌকস দল বিষয়টির উপর নজরধারী শুরু করে। এক পর্যায়ে গত শনিবার ভোরে বন্দরে বন্দর থানার লাঙ্গলবন্ধ চিড়াইপাড়াস্থ দক্ষিন পশ্চিম কণার্রে মঞ্জুর হোসেন জিকুর টিনসেড গুদাম ঘরের ভিতর থেকে উক্ত কভার্ড ভ্যানটি জব্দসহ উল্লেখিত ৭ চোরাকারবারিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হলেও র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায় অজ্ঞাত নামা ৪/৫ জন চোরাকারবারি দলের সদস্য।
স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ দিন ধরে চিড়াইপাড়াস্থ
কাটপট্টিতে দক্ষিন পশ্চিম কণার্রে মঞ্জুর হোসেন জিকুর টিনসেড গুদাম ঘরে আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হাসনাত জনি’র নেতৃত্বে ইতিমধ্যে র্যাব-৪ কর্তৃক গ্রেফতারকৃত জিকু ও পলাতক হিমেল, রিয়াজুল গং পন্য চোরাকারবারি
সহ নানান অপকর্ম করে আসছে। এছাড়াও গত ৭ জানুয়ারী সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা সংস্থা (ডিবি) মাদক উদ্ধারের জন্য গোপন সংবাদের ভিত্তিতে
মুছাপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত জনির লাঙ্গলবন্ধ স্ট্যান্ডের অফিসে ডিবি পুলিশের ৪/৫ টি গাড়ী সন্ধ্যার পর হঠাৎ অভিযান চালিয়ে ফেনসিডিলসহ জনিকে আটক করে। পরে তার অফিসে তল্লাশী চালিয়েও ফেনসিডিল উদ্ধার করলেও রহস্যজনক কারনে দীর্ঘ প্রায় ২ ঘন্টা পর তারা চলে যায়।
তবে আবু হাসনাত জনির ভাষ্য ডিবি পুলিশ তার অফিসে এসেছিল, তাদের সাথে পূর্বপরিচিত চা- নাস্তা খেয়ে কিছু সময় আড্ডা দিয়ে চলে যায়।
এ ঘটনায় এলাকাবাসী অনতিবিলম্বে চোরাকারবারি চক্রের সদস্য ও মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারের জোর দাবী জানিয়েছেন র্যাব ও নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের নিকট।