চলনবিলের শুটকি মাছ যাচ্ছে ভারতে।
শামীম আহমেদ পাবনা জেলা প্রতিনিধিঃ—
নাটোরের সিংড়ার চলনবিল অঞ্চেেলর দেশী মাছের শুটকি দেশের চাহিদা মিটিয়ে এখন বিদেশেও রপ্তানী হচ্ছে। এ অঞ্চলের দেশী মাছের শুটকির স্বাদ,ঘ্রাণ ও গুনগত মান ভালো থাকায় দেশের বিভিন্ন জেলা সহ ভারতেও রয়েছে এর ব্যাপক চাহিদা। মৎস্য ভান্ডার নামে খ্যাত চলনবিল অধ্যুষিত সিংড়া উপজেলার নাটোর- বগুড়া মহাসড়কের নিংইন এলাকার কোল ঘেষে গড়ে উঠেছে উপজেলার বৃহত্তম শুটকি পল্লি। এখানে রয়েছে ৫ টি শুটকির চাতাল। এ ছাড়া উপজেলার জোলার বাতা, বড়িয়া সহ এরকম ৭ টি স্থানে গড়ে উঠেছে শুটকি পল্লি। যেখানে কাজ করছেন শতশত নারী পুরুষ। শুটকি পল্লির এসব চাতাল থেকে প্রতি মৌসুমে ২শত ৩২ মেট্রিক টন দেশী প্রজাতি মাছের শুটকি উৎপাদন করা হয়। যা দেশের চাহিদা মিটিয়ে শুটকির পাইকারী বাজার সৈয়দপুর থেকে প্রক্রিয়াজাত হয়ে এখন যাচ্ছে ভারতে। নিংইন ও জোলার বাতা শুটকি পল্লিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টেংরা, পুটি, বোযাল, শোল সহ দেশী প্রজাতি মাছের শুটকি বাঁশের তৈরী বানার চাতালে শুকানো কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা। এসকল শ্রমিকদের মধ্যে নারী শ্রমিকের সংখ্যাই বেশি। শ্রমিকরা জানায়, সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত একজন নারী শ্রমিকের পারিশ্রমিক দেওয়া হয় ১৮০ থেকে ২০০ টাকা আর পুরুষ শ্রমিকদের দেওয়া হয় ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা। শুটকি উৎপাদনকারী শাহ আলম বলেন, মাছের আড়ৎ থেকে বিভিন্ন দামে মাছ কিনে আমরা এ চাতালে আনি। এর পর মাছ কেটে পরিস্কার করে রোদে শুকাই। শুকানো পর শুটকির মোকাম সৈয়দপুর নিয়ে যাই। পরে সেখান থেকে প্রক্রিয়াজাত করে ভারতে রপ্তানী করা হয। এছাড়া বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা এখানে এসে শুটকি কিনেন। নিংইন শুটকি চাতালের মালিক দৌলত ও জযনাল আবেদীন জানান, ৩ কেজি পুঁটি মাছে ১ কেজি, ৪ কেজি চিংড়ি মাছে ১ কেজি, ৩ কেজি শোল মাছে ১ কেজি, ৪ কেজি মোলা মাছে ১ কেজি এবং সাড়ে ৩ কেজি গুচি মাছে ১ কেজি করে শুটকি পাওয়া যায়। এর মধ্যে পুঁটি মাছের শুটকির চাহিদা সবচেয়ে বেশি। উৎপাদন খরচ কম হলেও দাম বেশি পাওয়া যায়। তারা আরও জানান, মাছের আড়তে গতবারের চেয়ে কাচা মাছ পাওয়া যাচ্ছে কম। সিনিয়ন উপজেলা মৎস্য অফিসার মোঃ শাহাদত হোসেন বলেন, শুটকি মাছ এখন রপ্তানিকারক একটি পণ্য। সঠিক উপায়ে উৎপাদন ও সংরক্ষণ করা গেলে সারা বছরই শুটকি মাছ বাজারজাত করা সম্ভব। চলনবিলের মিঠা পানি মাছ থেকে উৎপাদিত এখানকার শুটকির গুনগত মান ভালো এবং স্বাস্থ্য সম্মত। যারা শুটকি উৎপাদন করছেন আমরা তাদেরকে প্রতিনিয়ত মনিটরিং করছি। এ বছর চলনবিলে বর্ষার পানি বিঘ্নতা হওয়ার কারনে মাছের উৎপাদন কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। যার কারনে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কিছুটা কম উৎপাদন হতে পারে। তবে যেহেতু শুটকির বড় বাজার সৈয়দপুর থেকে ভারতে এখানকার শুটকির চাহিদা রয়েছে সে ক্ষেত্রে শুটকির উৎপাদন কম হলেও উৎপাদনকারীরা লাভবান হবেন।