বরিশালে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কাজ করে সাবলম্বী হচ্ছে নারীরা!
মাসুমা জাহান,বরিশাল ব্যুরো:
বরিশালে নারী কর্মীদের বাড়ছে কর্মসংস্থান।মুদি দোকান থেকে শুরু করে শপিং কমপ্লেক্স গুলোতে নারী কর্মীদের দেখা মিলছে আগের তুলোনায় দ্বিগুন।ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে নিয়োগ দেয়া হয় এদের।শুধু আকৃষ্ট নয় এরা নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেন তাই দিন দিন এদের গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়,প্রায় বছর দশ আগে বরিশালে হাতে গোনা কিছু সংখ্যক নারী কর্মচারী ছিলো।এরা ওই প্রতিষ্ঠানে আত্মীয় কিংবা পরিচিত ছিলো।যে কারনে বিশ্বস্ততার দিক দিয়ে তাদের কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল।সময় পরিবর্তন ও ব্যবসায়ীক দিক বিবেচনা করে বরিশালের অধিকাংশ বাণিজ্যক প্রতিষ্ঠানে নারী কর্মীদের সংখ্যা বাড়ছে। এরা ভালো ব্যবহার আর ধৈর্য্যের পরিচয় দিয়ে ক্রেতাদের বুঝিয়ে অতি সহজে পণ্য সামগ্রী বিক্রি করতে পারে।তাই এদের কাছে টানছেন ব্যবসায়ীরা।
এদের চাহিদা কম দোকান কিংবা শপিং কমপ্লেক্স থেকে নানা অজুহাতে যখন তখন বের হয়ে সময় অপচয় করেনা।এমনকি নিষ্ঠার সাথে কাজ করেন।একজন পুরুষ কর্মচারীরা বিভিন্ন অজুহাতে দোকান থেকে বের হয়ে ব্যক্তিগত কাজ কর্ম করেন বেতনও বেশি।এদের কিছু বললে উল্টো খারাপ ব্যবহার এবং প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি করেন।
সব দিক চিন্তা করে নারী কর্মচারীদের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। নগরী ঘুরে দেখা যায় মুদি দোকান, মিষ্টির দোকান, ফাস্টফুড, স্টেশনারীর দোকান, চায়ের দোকানে, জামাকাপড়, জুতা, কসমেটিক্স, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স এর দোকান, বিভিন্ন শোরুম থেকে শুরু করে এমন কি মোবাইল শোরুম গুলোতে নারী কর্মীদের উপস্থিত চোখে পরার মতো।এরা সদালাপী ও ক্রেতাদের অতি সহজে বুঝিয়ে পন্য বিক্রি করেন। যা প্রতিষ্ঠান মালিকদের কাছেও জনপ্রিয়। অধিকাংশ দোকানেই নারী কর্মচারীদের গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এসব দেখে বাকি প্রতিষ্ঠান মালিকেরাও নারী কর্মচারীদের নিয়োগের জন্য চিন্তা ভাবনা করছেন।
এদিকে বিভিন্ন দোকান ও শোরুম গুলোর সামনে বিজ্ঞাপনের জন্য নারী কর্মচারীদের প্রতিষ্ঠানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।এদের দেখে অনেক ক্রেতাই শোরুম ভিতরে প্রবেশ করেন। নারী কর্মচারী থাকায় অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বেঁচা বিক্রিও বেড়েছে। যা দেখে অন্য মালিকেরাও নারী কর্মচারী রাখতে চাচ্ছেন। শুধু কর্মচারী নয় দোকানে ম্যানেজার থেকে শুরু করে গুরুত্ব পূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হচ্ছে নারীরা। এদের মধ্যে অনেকে পড়াশুনার পাশাপাশি বাড়তি টাকা আয়ের জন্য দোকানে চাকরি নিচ্ছেন। একজন ক্রেতাকে বুঝিয়ে কিভাবে পন্য সামগ্রী বিক্রি করছেন তা চোখে দেখার মত।
বর্তমান সময়ে অনেক দোকানেই সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য নারী কর্মচারীদের গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এরা কেবল মাত্র বেচা বিক্রি করছে না।দোকান ও শোরুম সাজিয়ে গুছিয়ে পরিপাটি করে রাখছেন। একজন ক্রেতা দোকানে আসার সাথে সাথে তাকে বলছেন স্যার আপনার জন্য কি করতে পারি। এভাবে ব্যবহার দিয়ে ক্রেতাদের কাছে পণ্য বিক্রি করছেন।
এ বিষয় আঁচল বুটিক এর মালিক বিলকিস আহম্মেদ লিলির সাথে কথা বলতে গেলে তিনি জানান, আমার দোকান ম্যানেজার একজন নারী। সে নিজের মত করে শোরুম পরিচালনা করেন। কোথায় কি সাজিয়ে রাখতে হবে, কোন অকেশনে কি পোশাক বিক্রি করবে তা তাকে বলে দিতে হয়না।আমি শোরুমে না আসতে পারলে সে সব হিসাব নিকাশ করে শোরুম গুছিয়ে রাখেন। এক কথায় বলতে হয় সে এতটাই বিশ্বস্ত তাকে কিছু বলতে হয় না।
একাধিক মোবাইল শোরুম মালিকদের সাথে কথা বলতে গেলে তারা জানান, নারী কর্মচারীদের এক কথা বারবার বলতে হয় না অল্পতেই তারা বোঝেন। এদের চাহিদা কম, একা যতটুকু কাজ করেন তা দায়িত্ব সহকারে করেন। এরা বন্ধও কম দেন। বিশেষ করে ক্রেতাদের অতি সহজে বুঝিয়ে পন্য বিক্রি করতে পারেন তাই এদের কদর।
এ বিষয়ে একাধিক প্রতিষ্ঠান মালিকদের সাথে কথা বলতে গেলে তারা জানান, নারী কর্মচারীরা কাজে ফাঁকি কম দেয়। যতটুকু কাজ করেন তা সঠিক ভাবে করেন এদের সাথে বেশি কথা বলতে হয় না। এরা ক্রেতা আসলে ভালো ব্যবহার দিয়ে সহজে পন্য বিক্রি করতে পারেন। এদের দারা চুরির সম্ভাবনা নেই। এদের উপর বিশ্বাস করে দোকান ফেলেরেখে যাওয়া যায়। এক কথায় চিন্তা মুক্ত থাকা যায়।
দোকান কর্মচারী নাজমা বেগমের সাথে কথা বলতে গেলে তিনি বলেন, আমি প্রায় চার বছর ধরে কসমেটিক্সের দোকানে চাকরি করে নিজ পড়াশুনার খরচ চালাই। এখান থেকে যা টাকা পাই তা দিয়েই চলে যায়। প্রতিষ্ঠান মালিক খুব ভালো আমি কলেজে গেলে সে সময় তিনি দোকানে বসেন। এবং দোকানে থাকা অবস্থায় কাস্টমার না আসলে ভাইয়া আমাকে পড়তে বলেন। তার কাছ থেকে সকল সুযোগ সুবিধা পাই। এমনকি তিনি বেতনের টাকা ছাড়াও অনেক সময় বাড়তি টাকা দিয়ে থাকেন।
নগরীর মোবাইল শোরুমের স্টাফ সাদিয়ার সাথে কথা বলতে গেলে তিনি বলেন, আমি কয়েক বছর ধরেই কর্মচারী হিসেবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছি। শুরুতে অনেক নোংরা কথা শুনেছি প্রতিবাদ করতে পারি নাই কারণ সংখ্যায় আমরা খুব কম ছিলাম। এখন আর কেউ কিছু বলে না। সকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কাজ করে বাড়ি ফিরে যাই। অনেক মেয়েরাই এখন এ পেশায় আসছেন।