আজ ২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শাহিন হাওলাদার / বরিশাল প্রতিনিধি/
এএসআই কিবরিয়ার ভুল গ্রেপ্তারে কারাগারে মসজিদের ইমাম!
বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলায় রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামের মেনহাজ উদ্দিন হাওলাদারের পুত্র মসজিদের ইমাম সিরাজুল ইসলাম হাওলাদার (২৮)। বাকেরগঞ্জ থানায় যৌতুক মামলায় ওয়ারেন্ট ভুক্ত আসামি হিসেবে থানার এএসআই কিবরিয়ার ভুল গ্রেপ্তারের শিকার হন তিনি।
মসজিদ ইমাম সিরাজুল ইসলাম হাওলাদার তিনদিন কারাভোগের পর বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান।
ঈদুল আজহা উদযাপন করতে সিরাজুল ইসলাম তার নিজ বাড়িতে আসলে গত শুক্রবার দুপুরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই ঘটনার শিকার সিরাজুল ইসলাম হাওলাদার ঢাকার একটি মসজিদে ইমামতি করেন।
জানা যায়, মামলার প্রকৃত আসামি একই গ্রামের আরেক সিরাজুল হাওলাদার- এটা আদালতে নিশ্চিত করার পর রবিবার বিকাল ৫টায় বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ইমাম সিরাজুল ইসলাম মুক্তি পান। ঈদের ছুটিতে আদালত বন্ধ থাকায় তাকে তিন দিন বিনা দোষে কারাভোগ করতে হয়েছে।
সিরাজুল ইসলাম হাওলাদার জানান, আমার নামের সঙ্গে ইসলাম আছে ও পিতার নামের সঙ্গে মেনহাজ উদ্দিন হাওলাদার রয়েছে। এছাড়া প্রকৃত আসামি সিরাজুল হাওলাদার ও তার পিতার নাম মেনহাজ হাওলাদার শুধু বংশ এক ও তাদের ঠিকানাও একই গ্রাম। অথচ সঠিক তদন্ত ছাড়াই গত শুক্রবার বেলা দেড়টার দিকে আমাকে বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করেন এএসআই মো. কিবরিয়া। পরে আমি জানতে পারি সোনিয়া নামক এক গৃহবধূর যৌতুক মামলার আসামি তিনি। ওই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে শুক্রবার বিকালে কারাগারে পাঠানো হয়।
তিনি আরো বলেন, গ্রেপ্তারের পর আমার পরিবারের লোকজন মামলার কাগজপত্র তুলেন। এতে দেখা যায়- আসামি সিরাজুল ইসলাম ছাড়া অন্য আসামিরা অচেনা। পরে গ্রামের মুরব্বিদের সহযোগিতায় খোঁজখবর নিয়ে আসল আসামি সিরাজুল হাওলাদারের সন্ধান পান। এই সিরাজের পুত্র হাসানের স্ত্রী সোনিয়া ২০১৯ সালে মামলাটি দায়ের করেছিলেন।
আরো জানা যায়, ওই মামলার অপর দুই আসামি হলেন- হাসান ও তার মামা ফারুক। এসব কাগজপত্র আদালতে দাখিলের পর নিরীহ মসজিদের ইমাম সিরাজকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, আসল আসামি সিরাজুল হাওলাদার এই এলাকার জামাই। তার গ্রামের বাড়ি পার্শ্ববর্তী জেলা পটুয়াখালীর পাঙ্গাসিয়া গ্রামে। এই গ্রামে তার তেমন পরিচিতি নেই।
রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ রাজ্জাক বলেন, তিন বছর যাবত বাকেরগঞ্জ থানা থেকে তার কাছে যৌতুক মামলার ওয়ারেন্ট আসামি সিরাজের সন্ধান চাওয়া হচ্ছিল। তিনি আসামির পিতার নাম ও বংশের মিল অনুযায়ী, ঢাকায় মসজিদের ইমাম সিরাজ ছাড়া অন্য কোনো সিরাজের সন্ধান এলাকাতে পাননি। শুক্রবার তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। পরে স্বজনদের অভিযোগের ভিত্তিতে আসল সিরাজের সন্ধানে নামেন।
মামলার অপর আসামি ফারুকের সন্ধান পাওয়ার পর তিনি স্বীকার করেন, ভগ্নিপতি সিরাজুল হাওলাদারের ছেলে হাসানের স্ত্রী সোনিয়া ওই মামলাটি দায়ের করেছেন। মামলার অন্য আসামিরা আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন। একমাত্র সিরাজুল জামিন নেননি।
মাওলানা সিরাজকে গ্রেপ্তার করা এসআই গোলাম কিবরিয়া অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি প্রকৃত আসামি সিরাজকে ভেবেই মসজিদ ইমাম সিরাজুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছেন। এখন আসল আসামি গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
বাকেরগঞ্জ থানার ওসি এসএম মাকসুদুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, ওয়ারেন্ট অনুযায়ী, সিরাজ নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছেন এসআই কিবরিয়া। কিন্তু কোর্টে চালান দেওয়ার পর জানা যায়- আসল আসামি অন্য একজন সিরাজ। আসামি সিরাজ হাওলাদারকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।