আজ ২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ঝালকাঠি প্রতিনিধি : নামের সাথে আংশিক মিল থাকায় ডাকাতি মামলার দশ বছরের সাজাপ্রাপ্ত পালাতক আসামির পরিবর্তে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিয়ন ফিরোজ আলম হাওলাদার কে আটক করায় তার মুক্তির দাবিতে ঝালকাঠি প্রেসক্লাবে শনিবার সকালে স্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন । লিখিত বক্তব্যে গ্রেফতারকৃত ফিরোজ আলমের স্ত্রী বলেন আমি সুরাইয়া বেগম স্বামী মোঃ ফিরোজ আলম হাওলাদার সাঃ-বৈশাখিয়া, থানা-নলছিটি জেলা- ঝালকাঠী সাংবাদিক সম্মেলনে জানাইতেছি, আমার স্বামী মোঃ ফিরোজ আলম হাওলাদার ঢাকার আহসান উল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিয়ন হিসেবে ১৯৯৭ সনে চাকুরীতে যোগদান করে সুনামের সাথে নিয়মিত চাকুরী করে আসছেন। গত ৬/৩/২৩ তারিখ ওই প্রতিষ্ঠানের শবে ই বরাতের ছুটিতে আমার স্বামী ফিরোজ আলম বাড়িতে আসলে বিগত ৮/৩/২৩ তারিখ দুপুর অনুমান ১১.৩০ ঘটিকার দিকে বরিশাল র্যাব-৮ এর একটি টীম তাকে আটক করে নিয়ে যায় এবং পরবর্তীতে নলছিটি থানায় হস্তান্তর করলে তাকে ঝালকাঠি জেল হাজতে প্রেরণ করেন। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি যে, আমার স্বামীকে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার মামলা নং-২৬ তারিখ-১৩/০৩/২০০৭ এর একটি ডাকাতি মামলায় ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি হিসেবে আটক করে। আমি ও আমার আত্নীয় স্বজনরা ফরিদপুরে গিয়ে এই মামলা সংক্রান্ত কাগজপত্র উঠিয়ে দেখতে পাই যে, উক্ত মামলার ৫নং আসামী হিসেবে জুয়েল পিতা- অজ্ঞাত উল্লেখ আছে, কিন্তু ঠিকানা নেই। এছাড়াও উক্ত মামলায় ৫নং আসামি জুয়েল ওরফে ফিরোজাল ইতিপূর্বে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার মামলা নং-১১ তারিখ ১২/০৬/২০০৩ এ গ্রেপ্তার হওয়ার পর ২৮/০৩/২০০৪ তারিখ পর্যন্ত ফরিদপুর কারাগারে আটক ছিল (ডকুমেন্টস সংযুক্ত)। সেখানে আসামির নাম ফিরোজাল পিতা-মনু মিয়া সাং-বৈশাখিয়া থানা-নলছিটি জেলা- ঝালকাঠী উল্লেখ আছে। অথচ উক্ত ২০০৭ সনের মামলায় আমার স্বামীর নাম ও ঠিকানা কিভাবে এসেছে আমাদের বোধগম্য নয়। এছাড়াও আমার স্বামী ১৯৯৭ সনে চাকুরী নিয়ে নিয়মিত চাকুরীজীবী হিসেবে চাকুরী করে আসছে। আমার স্বামী যদি ডাকাতি মামলার আসামি হতো তাহলে ২০০৩ সনে সেই ডাকাতি মামলার আসামি ফিরোজাল ৯ মাস হাজত খেটেছে, তারপর থেকে পলাতক আছে। এখানে উল্লেখ্য আমার স্বামী যদি ডাকাতি মামলায় আটক হয়ে ৯ মাস যাবৎ কারাগারে থাকতো তাহলে তো তার চাকুরী থাকার কথা নয়। আমার স্বামী নিয়মিত চাকুরী করে প্রতিষ্ঠানে হাজির ছিল।
২৬ বছর যাবত নিয়মিত প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করে আসা আমার স্বামীর নাম ঠিকানা আংশিক মিল থাকায় সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই না করে ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি হিসেবে আটক করায় আমার স্বামী নিরপরাধ ব্যক্তি ফরিদপুর কারাগারে চার মাস ধরে সাজা ভোগ করে যাচ্ছেন। বর্তমানে আমার চারটি মেয়ের মধ্যে তিনটি মেয়ের লেখা পড়া ও বাসাভাড়াসহ সংসারের খরচ মেটানো একেবারেই সম্ভব হচ্ছেনা। এঅবস্থায় আমাদের মানবেতর জীবন-যাপন করতে হচ্ছে।।
আপনাদের অবগতির জন্য আরো জানাচ্ছি যে, বরিশাল র্যাব-৮ এর মেজর মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে গত ৮/৩/২৩ তারিখ দুপুরে নলছিটি উপজেলার মোল্লারহাট ইউনিয়নের বৈশাখিয়া চৌমাথা বাজার থেকে বৈশাখিয়া গ্রামের মো: নুর মোহাম্মদের পুত্র আমার স্বামী মোঃ ফিরোজ আলম হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করে, যা র্যাব-৮ এর
পক্ষ থেকে প্রেস রিজিলের মাধ্যমে জানানো হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয় বাস ডাকাতি মামলার ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি ফিরোজাল ওরফে জুয়েল (৫০)। ফিরোজাল ওরফে জুয়েল ২০০৭ সনের মার্চ মাসে সংঘটিত ফরিদপুরের একটি বাস ডাকাতি মামলার আসামি হিসেবে ২০১০ সনে ফরিদপুরের এক বিচারিক আদালত ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৩৫ হাজার টাকা অর্থদন্ড দেয়। বাস্তবে আমার স্বামীর নাম ফিরোজাল ওরফে জুয়েল নয় বরং আমার স্বামীর নাম মোঃ ফিরোজ আলম হাওলাদার।
নলছিটি উপজেলার মোল্লারহাট ইউনিয়নের নুর মোহাম্মদের পুত্র মোঃ ফিরোজ আলম হাওলাদার ০১/০২/১৯৭৯ সনে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ১৭/০৮/১৯৯৭ তারিখে রাজধানী ঢাকার তেজগাঁও ২০নং তেজতুরী বাজার আহসানউল্লাহ ইনস্টিটিউট অব টেকনিক্যাল এন্ড ভোকেশনাল এডুকেশন এন্ড ট্রেনিং নামক প্রতিষ্ঠানে পিয়ন হিসেবে চাকুরী গ্রহণ করে র্যাবেবের হাতে আটক হওয়ার আগ পর্যন্ত চকুরীতে নিয়োজিত ছিলেন। দীর্ঘ ২৬ বছরের চাকুরী জীবনে কখনও কোন মামলার আসামি হননি কিম্বা আটক / গ্রেপ্তার হয়ে জেল/জরিমানারও শিকার হননি।
ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার মামলা নং-২৩ তারিখ- ১৪/৪/২০০৩ ধারা,-৩৯৫/৩৯৭/৪১২ এর এজাহারে আসামির নাম শুধুমাত্র “জুয়েল” উল্লেখ করা হয় এবং অভিযোগ পত্রে ফিরোজাল ওরফে জুয়েল পিতা-মৃত নুর মোহাম্মদ ওরফে মুন্নু মিয়া, গ্রাম-বৈশাখিয়া, থানা-নলছিটি জেলা- ঝালকাঠী উল্লেখ করা হয়। এই একই আসামিকে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার মামলা নং-১১ তারিখ-১২/০৬/২০০৩ ধারা-৩৯৯/৪০২ গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এই আসামিকে উক্ত মামলা নং-২৩ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এই জুয়েল নামক আসামি ২৮ /০৩ /২০০৪ তারিখে জামিন লাভ করে পলাতক থাকে। সেই আসামিকেই ২০০৭ সনের ডাকাতি মামলায় পলাতক থাকা আদালত তাকে সাজা ও অর্থদন্ড প্রদান করে। ফিরোজাল ওরফে জুয়েল পিতা-মৃত নুর মোহাম্মদ ওরফে মুন্নু মিয়া গ্রাম-বৈশাখিয়া থানা-নলছিটি জেলা- ঝালকাঠী নামের ব্যক্তির পরিবর্তে মোঃ ফিরোজ আলম হাওলাদার পিতা-মোঃ নুর মোহাম্মদ মাতা-আম্বিয়া বেগম গ্রাম-বৈশাখিয়া থানা-নলছিটি জেলা- ঝালকাঠীকে আংশিক ঠিকানা সঠিক হিসেবে একটি প্রতিষ্ঠানে ২৬ বছর যাবত চাকুরী করা ব্যক্তিকে আটক করায় এলাকাবাসীও বিস্মিত হয়েছে।
ফিরোজ আলমের স্ত্রী সুরাইয়া আরও বলেন আমার স্বামী নির্দোষ সঠিক তদন্তের মাধ্যমে আমার স্বামীকে নিঃস্বার্থ মুক্তি দাবি জানাচ্ছি।