আজ ২৫শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ১০ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
হালিশহরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় মৃত্যুর সংগে পাঞ্জা লড়ছেন ব্যবসায়ী কামাল:আটক-৯
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহর এলাকায় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের সরকারি আবাসিক এলাকার বাউন্ডারির ভিতরে এলাকার চিহ্নিত কিশোর গাং গ্রুপের অতর্কিত হামলার শিকার হন মো কামাল উদ্দিন (৪২)নামের এক ব্যবসায়ী। সরেজমিনে গিয়ে ও মামলার বিবরণে জানা যায়, গত ৮ জুলাই রাত আনুমানিক নয়টার দিকে হালিশহর এলাকার সরকারি আবাসিক এলাকা গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের নিরাপদ এলাকায় ১০/১২ জনের কিশোর গ্যাংয়ের হাতে হামলার শিকার হন ব্যবসায়ী মো কামাল উদ্দিন। অনুসন্ধান করে জানা যায়, হামলার শিকার মো কামাল উদ্দিন ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে সন্ধ্যায় সরকারি আবাসিক এলাকা থেকে বের হলে বিডিআর সিনেমা হলের সামনে রাস্তায় একটি অবৈধ অটোরিকশা গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে পথ চলাচলের গতিরোধ করলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের কে রাস্তা ছেড়ে দিতে বলে অটোরিকশা সরাতে বলে। একপর্যায়ে অটোরিকশা গাড়ির চালক ও গাড়ির তিন যাত্রী তারা একযোগে কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়ে ব্যবসায়ী মো কামাল উদ্দিনের সাথে। স্হানীয় লোকজন এসে উভয় পক্ষকে থামিয়ে সমাধান করে দিলেও অটোরিকশা গাড়ির চালক ও গাড়ির যাত্রীরা মো কামাল উদ্দিন কে দেখিয়ে দেবে বলে জনসম্মুখে শাসিয়ে যায়। পরবর্তীতে ব্যবসায়ী মো কামাল উদ্দিন বাইরের কাজ সেরে বাসায় চলে আসে। ঘটনার পরবর্তী অটোরিকশা গাড়ির চালক সরকারি আবাসিক এলাকার ভিতরে ১০/১২ জনের কিশোর গ্যাং গ্রুপ নিয়ে বাসার সামনে এসে দারোয়ান দিয়ে ব্যবসায়ী মো কামাল উদ্দিন কে ডেকে বাসার নিচে নামিয়ে খেলার মাঠে দাঁড় করিয়ে উপর্যোপুরি খিল ঘুসি মারতে থাকে। একপর্যায়ে এ কিশোর গ্যাং গ্রুপ তাদের হাতে থাকা লোহার রড,ক্রিকেট স্ট্যাম্প, গাছের বাটাম দিয়ে আঘাত করতে থাকে। কিশোর গ্যাংয়ের হাতে হামলার শিকার মো কামাল উদ্দিনের আর্ত চিৎকারে কিছু লোকজন এগিয়ে এলে তাদেরকেও আক্রমন করে কিশোর গ্যাং গ্রুপ। একপর্যায়ে স্হানীয় মানুষের হৈ-হুল্লোড়ে ও স্হানীয় পুলিশ এগিয়ে এলে প্রাণে বেচে যান মো কামাল উদ্দিন। পুলিশ আসার টের পেয়ে হামলাকারী কিশোর গ্যাং গ্রুপ পালিয়ে যায়। স্হানীয় লোকজন ও পুলিশ হামলার শিকার মো কামাল উদ্দিন কে দ্রুত উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য পরবর্তীতে তাকে বেসরকারি হাসপাতাল এভারকেয়ারে ভর্তি করানো হয়। হামলায় শরীরের বিভিন্ন অংগসমূহের অসামান্য ক্ষতি হওয়ায় পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শে ভারতে নেওয়া হয়। বর্তমানে ব্যবসায়ী মো কামাল উদ্দিন ভারতের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এবং মৃত্যুর সাথে পান্জা লড়ছেন।
এদিকে মামলায় অভিযুক্ত বেশ কয়েকজন আসামি আটক করেছে পুলিশ। আটককৃত আসামিরা বর্তমানে কারাগারে রয়েছে। আটককৃত আসামিরা হল, ১. মোঃ তৌফিক এলাহী (১৯), ২. মোঃ সাগর (১৯), ৩. মোঃ হারিছ (১৮), ৪. মোঃ রাজন (১৮), ৫. মোঃ আকাশ হোসেন(১৯), ৬. মোঃ সবুজ ৭. মোঃ সুজন হাওলাদার(২০),৮. মোঃ মারুফ (২০), ৯. মোঃ মাছুম (১৯)। মামলায় অভিযুক্ত ও ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে বাকি আসামিদের আটকে পুলিশ নজরদারি রেখেছে বলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রুহুল আমিন এ প্রতিবেদক কে জানান। তিনি বলেন, অবিলম্বে বাকি আসামিরা আটক হবে। ঘটনার সাথে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। মামলা আইন অনুযায়ী চলমান রয়েছে। ঘটনার শিকার ভিকটিম বর্তমানে দেশের বাইরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকায় মামলা পরিচালনায় কিছু টা বিঘ্ন হচ্ছে।
এদিকে কিশোর গ্যাং কর্তৃক গুরুতর আহত হওয়ায় ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন ডিজিটাল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন ও জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির নেতৃবৃন্দ।
ডিজিটাল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি মো হাসান মুরাদ বলেন, কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলে সামনে আরও নানা ঘটনা ঘটতে পারে। পুলিশকে অপরাধ দমনে ও কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে আরও কঠোর হতে হবে। তিনি ব্যবসায়ী মো কামাল উদ্দিন কে হামলাকারী কিশোর গ্যাং গ্রুপের শাস্তি দাবি করেন।
জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক মো সেলিম উদ্দিন বলেন, শান্ত মনের মানুষ মো কামাল উদ্দিন এর মতো মানুষের কিশোর গ্যাং থেকে নিরাপদ না হলে তা এখন ভাবার সময় এসেছে। জরুরি ভিত্তিতে কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে আরও কঠোর হতে হবে প্রশাসনকে।