আজ ২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
মাওলানা শামীম আহমেদ,
আলোচকঃ বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশন ঢাকা।
আরবি চান্দ্রবর্ষের সপ্তম মাস হলো রজব। রজব মাসের পূর্ণ নাম হলো ‘আর রজব আল মুরাজজাব’ বা ‘রজবুল মুরাজ্জাব’। ‘রজব’ অর্থ ‘সম্ভ্রান্ত’, ‘প্রাচুর্যময়’, ‘মহান’। ‘মুরাজ্জাব’ অর্থ ‘সম্মানিত’; ‘রজবে মুরাজ্জাব’ অর্থ হলো ‘প্রাচুর্যময় সম্মানিত মাস’। হারাম তথা সম্মানিত ও যুদ্ধবিগ্রহ নিষিদ্ধ মাসগুলোর অন্যতম হলো রজব। চারটি মাসকে হারাম মাস হিসেবে ধরা হয়। এগুলো হলো জিলকদ, জিলহজ, মহররম ও রজব। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা আসমান-জমিন সৃষ্টি করার দিন থেকেই বৎসর হয় বারো মাসে। এর মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত; তিনটি একাধারে জিলকদ, জিলহজ ও মহররম এবং চতুর্থটি হলো “রজব মুদার”, যা জুমাদাল উখরা ও শাবান মাসের মধ্যবর্তী।’ (মুসলিম)।
‘মুদার’ উভয়বিধ বা বহুবিধ কল্যাণের সম্মিলন। রজব ও শাবান হলো জোড়া মাস। রজব ও শাবান মাসদ্বয়কে একত্রে রজবান বা রজবাইন অর্থাৎ রজবদ্বয় বলা হয়। রমজানের আগে এ দুই মাস আমল ও সাধনার জন্য অত্যন্ত উপযোগী ও সবিশেষ উর্বর।
রাসুলুল্লাহ (সা.) রজব ও শাবান মাসব্যাপী এ দোয়া বেশি পরিমাণে পড়তেন, ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজব ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগ না রমাদান’। অর্থ, ‘হে আল্লাহ! রজব মাস ও শাবান মাস আমাদের জন্য বরকতময় করুন; রমজান মাস আমাদের নসিব করুন।’ (বুখারি ও মুসলিম)।
উম্মে সালমা (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) রমজান মাস ছাড়া সবচেয়ে বেশি রোজা পালন করতেন শাবান মাসে, অতঃপর রজব মাসে। হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, ‘যখন রজব মাস আসত, তা আমরা নবীজি (সা.)–এর আমলের আধিক্য দেখে বুঝতে পারতাম।’ কোনো কোনো বর্ণনায় পাওয়া যায়, নবীজি (সা.) রজব মাসে ১০টি রোজা রাখতেন, শাবান মাসে ২০টি রোজা রাখতেন; রমজান মাসে ৩০টি রোজা রাখতেন। (দারিমি)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রজব হলো আল্লাহর মাস, শাবান হলো আমার (নবীজির) মাস; রমজান হলো আমার উম্মতের মাস।’ (তিরমিজি)। ‘যে ব্যক্তি রজব মাসে (ইবাদত দ্বারা) খেত চাষ দিল না এবং শাবান মাসে (ইবাদতের মাধ্যমে) খেত আগাছামুক্ত করল না; সে রমজান মাসে (ইবাদতের) ফসল তুলতে পারবে না।’ (বায়হাকি)।
রজব মাসের বিশেষ আমল হলো বেশি বেশি নফল রোজা রাখা। বিশেষত প্রতি সোমবার, বৃহস্পতিবার, শুক্রবার এবং মাসের ১, ১০; ১৩, ১৪, ১৫; ২০, ২৯, ৩০ তারিখ রোজা রাখা। অধিক হারে নফল নামাজ পড়া। বিশেষ করে তাহাজ্জুদ, ইশরাক, চাশত-দোহা, জাওয়াল, আউয়াবিন; তাহিয়্যাতুল অজু, দুখুলুল মাসজিদ ইত্যাদি আদায় করা।
এ মাসের গুরুত্বপূর্ণ আরও আমল হলো অধিক পরিমাণে কোরআন তিলাওয়াত করা; কোরআন তিলাওয়াত শিক্ষা করা ও শিক্ষা দেওয়া; যাঁরা জানেন তাঁদের জন্য সহিহ্-শুদ্ধ করা এবং অর্থসহ শেখা।
হজরত সালমান ফারসি (রা.) হতে বর্ণিত আছে, রজব মাসের প্রথম তারিখে ১০ রাকাত নফল নামাজ পড়তে হয়। হজরত উমর (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, অতি মহান চারটি রাত হলো: রজব মাসের প্রথম রাত, শাবান মাসের মধ্য দিবসের রাত (শবে বরাত), শাওয়াল মাসের প্রথম রাত (ঈদুল ফিতর বা রমজানের ঈদের রাত), জিলহজ মাসের দশম রাত (ঈদুল আজহা বা কোরবানি ঈদের রাত)।