প্রকাশিত হয়েছেঃ জুলাই, ৮, ২০২৪, ৬:০১:অপরাহ্ণ , সর্বশেষ আপডেটঃ ০৬:০১:১৭
নিজস্ব প্রতিবেদক,
চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার ছদাহায় ১৭টাকা পাওনাকে কেন্দ্র করে মাহমুদুল হক নামের ১যুবলীগ কর্মী খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত সাকিব (২৪) নামের ১যুবককে আটক করেছে বলে জানা গেছে।
৮ জুলাই সোমবার বেলা ২টার দিকে ছদাহা ইউনিয়নের ছোট ঢেমশা এলাকায় আসামীর বসতঘরের ছাদের উপর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।আটককৃত সাকিব হচ্ছে ছদাহা ইউনিয়নের ছোট ঢেমশা ৬ নং ওয়ার্ডের মোহাম্মদ মিয়ার ছেলে।
সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রিটন সরকার গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘হত্যামামলার আসামি সাকিবকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।’
গত ২৮ মে দুপুর ২টায় সাতকানিয়া উপজেলার ছদাহা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড মিঠার দোকান এলাকার জাকির স্টোরের সামনে ছুরিকাঘাতে যুবলীগ কর্মী দিনমজুর মাহমুদুল হক (৩৩) প্রকাশ্যে খুন হন।। ছোট ভাই মাহমুদুলকে বাঁচাতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের হাতে ছুরিকাঘাতে আহত হন মেজ ভাই জিয়াবুল হকও (৩৬)।
মাহমুদুল হকের বাড়ি সাতকানিয়া উপজেলার ছদাহা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড মিঠার দোকান এলাকায়। তিনি মিঠার দোকান এলাকায় স্থানীয় মাওলানা ফিশ ফিড কোম্পানিতে দিনমজুরের কাজ করতেন। ৫ বছর বয়সী এক কন্যাসন্তান রয়েছে তার। মাহমুদুল হকের বাবা ছদাহা পূর্ব আজিমপুর ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি বদিউল আলম।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাহমুদুল গত সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই তিনি হত্যার হুমকি পাচ্ছিলেন বলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, নৃশংস খুনের এই মামলায় নেতৃত্ব দেন— সাতকানিয়ার ছদাহা আজিমপুর ৫ নং ওয়ার্ডের মো. সোলেমানের ছেলে মো. সাইফুল (২৪), আজিজুল হক প্রকাশ রাজা মিয়ার ছেলে আরিফুল ইসলাম সোহাগ (২৫), ফেরদৌসের ছেলে রায়হান (২২), আনিছুর রহমানের ছেলে তাসিব (২২) ও শফিকুর রহমানের ছেলে নুরুল ইসলাম ২৪),ছদাহা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড ছোট ঢেমশা এলাকার নুরুল আবছারের ছেলে সাকিব প্রকাশ টোকাই সাকিব (২৪) ও মাহবুবুর রহমানের ছেলে আরফিন সুলতান (২২)।
উল্লেখ্য, ২৮মে দুপুর ২টার দিকে মাহমুদুল হক ও তার বড় ভাই এনামুল হকের শ্যালক আরিফুল ইসলাম নাস্তা করার জন্য ছদাহা মিঠার দোকান এলাকার জাকির সওদাগরের দোকানে গেলে তারা দেখেন, অন্তত সাতজন বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র প্রকাশ্যে নিয়ে সেখানে বসে আছেন। এর মধ্যে সাইফুল, রায়হান ও আরিফুল ইসলাম সোহাগের হাতে টিপ ছুরি ছিল। অন্যদিকে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র ছিল সাকিব প্রকাশ টোকাই সাকিব, তাসিব, নুরুল ইসলাম ও আরফিন সুলতানের হাতে। অস্ত্রগুলো দেখে মাহমুদুল হক ও আরিফুল ইসলাম দোকান ছেড়ে বের হওয়ার জন্য চাইতেই অপেক্ষমাণ সশস্ত্র কিশোর গ্যাং সদস্যরা তাদের পথরোধ করে। এর একপর্যায়ে তারা মাহমুদুল হককে ঝাপটে ধরে দোকানের ভেতরে ঢুকিয়ে ফেলে। এ সময় সাইফুল তার হাতে থাকা ধারালো ছুরি মাহমুদুল হকের নাভির নিচে সজোরে ঢুকিয়ে দেয়। এ সময় তার নাড়িভুঁড়ি কাটা অবস্থায় মাটিতে নিথর হয়ে পড়ে যান মাহমুদুল। এরপরও তার মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য সোহাগ , রায়হান, টোকাই সাকিব, তাসিব, নুরুল ইসলাম ও আরফিন সুলতান মাহমুদুলের নিথর শরীরের ওপর এলোপাতাড়ি ঘুষি ও লাথি মারতে থাকেন। মাহমুদুলের গোঙানির শব্দ শুনে তার বড় ভাই সিএনজিচালক জিয়াবুল হক জিয়া ও ভাইয়ের শ্যালক আরিফুল ইসলাম তাকে বাঁচাতে গেলে টোকাই সাকিব ও তাসিব জিয়াবুলকে ঝাপটে ধরে রাখে। ওই চক্রের সদস্য আরিফুল ইসলাম সোহাগ এ সময় জিয়াবুলের পেটে ছুরি ঢুকিয়ে দিলে তিনিও মাটিতে পড়ে যান। এ সময় আরিফুল ইসলামকেও বেদম মারধর করে তারা।
এদিকে ঘটনার খবর শুনে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে হত্যাকারীরা তাদের ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল ফেলেই ঘটনাস্থল ছেড়ে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন আহত জিয়াবুল হক জিয়ার পরা শার্ট খুলে দুই ভাই মাহমুদুল হক ও জিয়াবুলের জখম হওয়া পেটে বেধে সাতকানিয়ার কেরানিহাটের একটি হাসপাতালে নিয়ে যায়। তবে গুরুতর অবস্থা দেখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দ্রুত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। এরপর অ্যাম্বুলেন্সে করে কয়েক ঘন্টা পর চট্টগ্রাম মেডিকেলের জরুরি বিভাগে পৌঁছালে কর্তব্যরত চিকিৎসক মাহমুদুল হককে মৃত ঘোষণা করেন। গুরুতর আহত আরেক ভাই জিয়াবুলকে ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয়।
মাহমুদুল হকের ভাই এনামুল হক বলেন, ‘যেহেতু সংগঠনের বিভিন্ন পদ ও দায়িত্বে আছি আমরা, সে কারণে নেত্রীর নির্দেশে নৌকার পক্ষে কাজ করেছে আমাদের পরিবার। আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করা যে এতো বড় কাল হয়ে দাঁড়াবে আমরা ভাবতেও পারিনি।’