আজ ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বরিশালের আগৈলঝাড়ায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েও দুশ্চিন্তায় কেয়ার পরিবার!
মাসুমা জাহান,বরিশাল ব্যুরো:
বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে এবার এসএসসি পাস করেছে কেয়া আক্তার (১৫)। কিন্তু অন্য সবার মতো আনন্দ নেই তার পরিবারের সদস্যদের মনে। তাদের মনে শঙ্কা কাজ করছে কেয়ার আগামীর পড়াশোনা নিয়ে।
কেয়া আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা উত্তর শিহিপাশা গ্রামের মৃত বাদশা সরদারের মেয়ে।বয়স যখন মাত্র ১২ মাস তখন বাবা বাদশা সরদারের মৃত্যু হয়।কেয়াদের সংসারে অভাব-অনটন ঘিরে ধরে।খেয়ে না খেয়ে কোন ভাবে তাদের দিন কাটছে।মা রাশিদা বেগম সন্তানদের খাবার জোগাতে অন্যের বাড়িতে কাজ নেন।তবে তা দিয়ে সংসার চলে না।বাধ্য হয়ে বিভিন্ন সময় এলাকাবাসী ও আত্মীয়-স্বজনের কাছে হাত-পেতে সাহায্য নিয়েছেন তিনি।
অভাব-অনটনের টানাটানির সংসারে মেয়েকে পরীক্ষার সময় ভালো একটি জামাও কিনে দিতে পারেননি মা রাশিদা বেগম।ছাত্র-ছাত্রীরা যেমন প্রাইভেট পড়ে,তেমন সুযোগ হয়নি কেয়ার।এরপরও থেমে থাকেনি সে। পড়াশোনার জন্য রীতিমতো সংগ্রাম করতে হয়েছে তাঁকে। সাংসারিক কাজে মাকে সহযোগিতার পাশাপাশি দৈনিক ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা পড়াশোনা করেছে।অদম্য ইচ্ছা আর নিরলস প্রচেষ্টায় এবার এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে সে তাক লাগিয়ে দিয়েছে।গৈলা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল সে।
কেয়ার মা রাশিদা বেগম বলেন,‘অভাব-অনটনের সংসারে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করানো আমার জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।কিন্তু কেয়া শিশুকাল থেকেই পড়াশোনার প্রতি খুব ঝোঁক।পাশের বাড়ির ছেলে-মেয়েরা পড়তে বসলে প্রবল আগ্রহ নিয়ে শুনতো।কয়েকবার শোনার পর সেগুলো মুখস্থ বলতে পারতো কেয়া।পড়াশোনার প্রতি প্রবল আগ্রহ দেখে তাকে স্কুলে ভর্তি করে দেই।প্রতি ক্লাসেই সে ভালো ফলাফল করে উত্তীর্ণ হয়েছে।কেয়া এসএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে। কেয়ার এ সাফল্যে খুশি হয়েও বর্তমানে চরম দুশ্চিন্তায় আছি। ওর কলেজের পড়াশোনার খরচ কীভাবে চালাবো বুঝতে পারছি না।
রাশিদা আরও বলেন, অভাব-অনটনের টানাটানির সংসারে মেয়েকে পরীক্ষার সময় ভালো একটি জামাও কিনে দিতে পারিনি।ছাত্র-ছাত্রীরা যেমন প্রাইভেট পড়ে, তেমন সুযোগ হয়নি কেয়ার। সেই সক্ষমতাও ছিল না আমার। পড়াশোনার জন্য এ বয়সেই অনেক কষ্ট করেছে কেয়া।সরকারি ভাবে বা সমাজের কোনো বিত্তবান ব্যক্তি এগিয়ে এলে কেয়াকে নিয়ে দুশ্চিন্তা দূর হতো। কেয়া আবার লেখাপড়ার সুযোগ পেত।
কেয়া জানায়,ছোট বেলা থেকেই সংসারে শুধু অভাব-অনটন দেখেছি। এমন দিন গেছে ঘরে এক ছটাকও চাল ছিল না। পড়াশোনা তো দূরের কথা দু’বেলা দুমুঠো খাবার জোগানোই আমাদের জন্য দুরহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল।সংসার চালাতে মা অনেক কষ্ট করছেন। মা সাহস দিয়ে গেছেন। অতীতের ভালো রেজাল্টের কথা জানতে পেরে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আমাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছে,সহযোগিতা করেছে। যখন সুযোগ হতো বই নিয়ে বসতাম।কখনো অলসতা করতাম না।
সরকারি গৈলা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক জহিরুল হক বলেন, কেয়া ক্লাস ফাঁকি দিত না। শিক্ষক পড়ানোর সময় ক্লাসে মনোযোগ দিত। পরে একাই তা রপ্ত করতো। কেয়া অনেক মেধাবী। পারতেই হবে, করতে হবে-এমন স্পৃহা ওর মধ্যে দেখা যায়। পড়াশোনার জন্য তাকে রীতিমতো সংগ্রাম করতে হয়েছে। অভাব জয় করে কেয়া যে সাফল্য দেখিয়েছে, তা অন্যদের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে।
জহিরুল হক আরও বলেন, কেয়ার উচ্চশিক্ষার জন্য বড় বাধা অর্থনৈতিক সংকট। এখন সেই সহায়তাটা প্রয়োজন। সরকারিভাবে বা সমাজের কোনো বিত্তবান এগিয়ে এলে কেয়ার মতো শিক্ষার্থীরা আরও সামনে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারে|