আজ ২৫শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ১০ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
রাজশাহী ব্যুরো: এমপি’র বাড়ীতে তুলে নিয়ে গিয়ে মাদ্রাসার অধ্যক্ষকে নির্যাতন করা হয়েছে, এমন অভিযোগ তুলে রাস্তা অবরোধ করেছে এলাকাবাসি ও শিক্ষার্থীরা। এমপি’র বাড়ীতে প্রায় তিন ঘন্টা আটকে রেখে নির্যাতনের পর ঐ অধ্যক্ষকে পুলিশ উদ্ধার করে।
জানা যায়, রবিবার (১৫ অক্টোবর) রাজশাহী ৫ আসনের (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) এমপি ডা. মনসুর রহমান মোবাইল ফোনে পুঠিয়া উপজেলার (বিড়ালদহ) সৈয়দ করম আলী ফাজিল মাদ্রাসা অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমানকে তুলে আনার হুমকি দেন। যার ফোন কল রেকর্ড এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। হুমকির একদিন পর এমপি’র নির্দেশে আওয়ামী লীগের ৫ নেতাকর্মী ওই শিক্ষককে তুলে নিয়ে যান। এ সময় তার মুক্তির দাবিতে বিড়ালদহ এলাকায় রাজশাহী-ঢাকা সড়ক প্রায় দেড় ঘন্টা সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন। প্রায় তিন ঘণ্টা পর পুলিশের মাধ্যমে অধ্যক্ষকে মাদ্রাসায় পাঠানো হয়।
ছাত্রছাত্রীরা জানায়, মাদরাসার কমিটি নিয়ে বিরোধের জের ধরে সোমবার (১৬ অক্টোবর) সকাল পৌনে দশটার দিকে একই এলাকার মঈন, শফিক সহ কয়েকজন একটি প্রাইভেট কার নিয়ে মাদ্রাসা ক্যাম্পাসে আসে এবং অধ্যক্ষের কক্ষে গিয়ে তাকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে টেনে হেঁচড়ে তাদের গাড়িতে করে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান বলেন, ‘মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির মেয়াদ শেষ হলে নতুন কমিটি গঠন করা হয়। এ নিয়ে এমপি ডা. মনসুর রহমান ক্ষুব্ধ হয়ে শনিবার রাত ৯টায় ফোন করে বলেন, এক্ষুনি আমার বাসায় আসেন। আমি জানাই, আমি তো পাবনায় গ্রামের বাড়িতে। ফিরব রোববার ভোরে। তখন এমপি বলেন, তাহলে কাল রাতে আসেন। আসতে পারবেন তো? না আসতে পারলে ঘাড় পাকিয়ে তুলে আনব।’ ডা. মনসুর রহমানের এ বক্তব্যের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান আরও বলেন, ‘এর একদিন পর সোমবার সকাল ৯টায় শফিকুল ইসলাম ডাবলু, মুহিন, তুষারসহ পাঁচজন আমাকে জোর করে একটি মাইক্রোবাসে তোলে। এ সময় তারা আমাকে কিল ঘুষি দিতে থাকে। তারা জোর করে আমাকে এমপির বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে যাওয়ার পর কমিটি নিয়ে আমাকে এমপি জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। পরে অবশ্য তুলে আনার জন্য ভুল স্বীকার করেছেন। মুহিনকে দিয়ে ক্ষমা চাইয়েছেন। এ ঘটনায় এখন মামলা করব কিনা স্থানীয় লোকজন, অভিভাবক তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।
জানতে চাইলে এমপি ডা. মনসুর রহমান বলেন, ‘রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. নওশাদের বাড়ি বিড়ালদহে। আমি ডা. নওশাদকে সভাপতি করেছিলাম। কিন্তু অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান আমাকে না জানিয়ে গোপনে ডা. নওশাদকে বাদ দিয়ে দারার (সাবেক এমপি ও রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারা) লোককে সভাপতি করেছে। এজন্য তাকে ফোন করেছিলাম। পরে কিছু লোক তাকে তুলে এনেছিল। আমি অধ্যক্ষের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে পুলিশ ডেকে মাদ্রাসায় পাঠিয়ে দিয়েছি। অধ্যক্ষকে ঘাড় পাকিয়ে তুলে আনার হুমকির বিষয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের হুমকি আমি দিইনি। এসব দারার কারসাজি।
বিড়ালদহ সৈয়দ করম আলী ফাজিল মাদ্রাসার বর্তমান সভাপতি আব্দুস সালেক বলেন, আমি আমার যোগ্যতায় সভাপতি হয়েছি। আমাকে আব্দুল ওয়াদুদ দারা সভাপতি করেননি। কিন্তু মাদ্রাসা চালু অবস্থায় শিক্ষার্থীদের সামনে দিয়ে অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত করে তুলে নিয়ে যাওয়া খুবই ন্যক্কারজনক ঘটনা। এ ঘটনার উপযুক্ত শাস্তি দাবি করছি। আমরা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছি। এরপর অধ্যক্ষকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিষয়টি নিয়ে রাজশাহীর পুলিশ সুপার সাইফুর রহমানের সাথে কথা বললে তিনি জানান, সংসদ সদস্য অধ্যক্ষকে ডেকেছিলেন। পরে তিনি গিয়েছিলেন। তুলে নিয়ে যাওয়ার কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।