আজ ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
মো জিল্লুর রহমান খান
বাঘা উপজেলা প্রতিনিধিঃ
অপরিচিত থেকে হয়ে উঠে ভার্চুয়ালি পরিচয়। তারপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে কথপোকথনে জমে উঠে প্রেম। একে অপরের প্রেমে হাবুডুবু খেতে থাকে তারা। প্রেমের ৩ মাস অতিবাহিত হতে না হতে সিদ্ধান্ত হয় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার। কিন্তুু কেই বা জানতো এই বিয়ের মাত্র ৩ মাসেই আবার সংসার ভাঙ্গার আশংঙ্কাও দেখা দেবে।
ঘটনাটি রাজশাহীর বাঘা উপজেলার অমরপুর এলাকার মুক্তার আলীর ছেলে
পলাশ আহমেদ (২১) ও নরসিংদী জেলার রায়পুর উপজেলার পূর্ব হরিপুর গ্রামের মোস্তোফা’ র মেয়ে ফাতেমা (২০) এর জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা।
জানা যায়, সে সময় পলাশ ঢাকায় চাকুরী করত। প্রথমে পলাশের সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পরিচয় হয় ফাতেমা নামের মেয়েটির। যোগাযোগ শুরুর ৬ মাস পর প্রেমের গভীরতায় তারা দুজন বিয়ের স্বপ্ন দেখে। একে অপরকে ছাড়া যেন একটি মুহূর্ত থাকতে পারবেনা। অবশেষে বিয়েতে পরিনত হয় প্রেম।ফাতেমা আক্তারের বাবা-মা এই বিয়ে মেনে নেবে না। কিন্তূ প্রেম কোন বাধা মানেনা তাই দুজনে সিদ্ধান্ত নেয় পালিয়ে বিয়ে করবে। তাই ফাতেমা আক্তার নরসিংদী থেকে পলাশের হাত ধরে প্রায় ৩০০ কি. মি.পথ পাড়ি দিয়ে চলে আসে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার নিমপাড়া গ্রামে পলাশের নানার বাড়ীতে। সেখানেই ২৮/০৭/২০২৩ ইং তারিখে ৫০ হাজার টাকা দেনমোহর ধার্য্য করে বিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করেন কাজী সিদ্দিক। কাবিননামায় স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, দেনমোহর ৫০ হাজার টাকা এর মধ্যে নাকফুল বাবদ নগদ ১ হাজার টাকা, বাঁকী ৪৯ হাজার টাকা।
পলাশের পরিবার সুত্রে জানা যায়, বিয়ের মাত্র ১দিন পর পলাশ তার স্ত্রী ফাতেমা কে সঙ্গে নিয়ে চলে আসে বাঘা উপজেলার অমরপুর গ্রামের নিজ বাড়িতে। পলাশের
হঠাৎ এমন কান্ড দেখে গ্রামবাসী অবাক! সহজ সরল ও সাদা মাটা ছেলে পলাশের দ্বারা কিভাবে সম্ভব এমন বিয়ে। বাবা-মা এই বিয়েতে খুশি না হলেও ছেলে পলাশ
যখন বিয়ে করেই ফেলেছে তখন আর তারা ফেলে দিতে পারেনি। সাদরে গ্রহণ করে আনন্দ উল্লাসের মাধ্য দিয়ে দিন কাটতে থাকে তাদের। কিন্তুু সুখ যেন আর সইলো না সহজ সরল পলাশের কপালে।বিয়ের কয়েকদিন যেতে না যেতে পলাশের সংসারে শুরু হয় কাল বৈশাখী ঝড়।
বিয়ের তিনদিন পর থেকে বারংবার
ফাতেমার বাবা ও মামা সঙ্গে আরও ২-৩ জন নিয়ে আসে পলাশের বাড়িতে। তাদের এই আসার উদ্দেশ্য কি ? আত্নীয়তার বন্ধন মজবুত করতে নাকি বন্ধন ছিন্ন করায় তাদের আসার মূল উদ্দেশ্য তা অজানাই রয়ে যায়! তবে প্রথম বার থেকেই ফাতেমা কে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেয় তার বাবার পক্ষের লোকজন। কিন্তুু কিছুতেই ফাতেমা তার বাবার সাথে যেতে রাজি হয়না। তৃতীয় বার তারা পুনরায় এসে দেনমোহর নিয়ে প্রশ্ন তোলে! তারা দাবি করে দেনমোহর ৫ লক্ষ টাকা করার প্রস্তাবও দেন। কিন্তুু এতে রাজি হয়না পলাশের পরিবার। আর এই দেনমোহরই হয়ে উঠে সংসার ভাঙ্গার মূল হাতিয়ার।
ফাতেমার স্বামী পলাশ আহমেদ বলেন, যে দিন থেকে ফাতেমা তার বাবা মায়ের সাথে ফোনে লুকিয়ে কথা বলতে শুরু করেছে। সে দিন থেকে ফাতেমার অসহনীয় আচরন লক্ষ করেছি। সব সময় দেনমোহর নিয়ে আমার সাথে রাগারাগি করত। পলাশ অভিযোগ করে বলেন, এক রাতে ফাতেমা তাকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করার চেষ্টা করে। ব্লেড হাতে নিয়ে রাতভর বসে থাকতো ফাতেমা তখন তাকে পাহারা দিয়ে রাখতে হতো। একদিন ঘরের সিলিং ফ্যানের সাথে উড়না ঝুলিয়ে আত্ব হত্যার চেষ্টাও করে। মঙ্গলবার সকালে ফাতেমা বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।
সর্বশেষ বার অর্থাৎ চতুর্থ বার ফাতেমা নিজেই মঙ্গলবার তার পিতা মোস্তফা কে আসতে বলে তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। সে দিন ৯৯৯ এর মাধ্যে বাঘা থানা পুলিশ কে খবর দেওয়া হয়। পলাশের বাড়িতে বাঘা থানা পুলিশের এএসআই মন্টু সঙ্গীয় ফোর্স সহ উপস্থিত থেকে ফাতেমাকে তার পিতার হাতে তুলে দেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, বাউসা ইউনিয়নের ৩ ওয়ার্ড সদস্য
রেজাব আলী, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা আলম ও রেজাউল ইসলাম (নিজল) সহ অত্র এলাকার গণ্য মান্য ব্যাক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
পলাশের পিতা অভিযোগ করে বলেন, বৌ মায়ের সাথে কোন রাগারাগি নেই। অথচ তার বাবা লোকজন নিয়ে আমার বাড়ি থেকে পুলিশ ও এলাকার সুধি জনের সামনে থেকে ফাতেমা কে নিয়ে গেলো। কিন্তুু কিভাবে তারা তার মেয়েকে নিয়ে গেলো কিছুই বুঝলাম না?
পলাশ ও তার পরিবারের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ফাতেমা ও তার পিতা মোস্তফা তা অস্বীকার করে উল্টো পলাশ,পলাশের মা ও বাবার প্রতি মারধরের অভিযোগ করেন তারা । এ সময় সংবাদ প্রকাশ করলে মামলা দায়ের করবেন মর্মে সাংবাদিক কে হুমকি দেন ফাতেমার বাবা মোস্তফা।
এ বিষয়ে বাঘা থানার উপ পরিদর্শক মন্টু বলেন, এ বিষয়ে বাঘা থানার সহকারী উপ পরিদর্শক মন্টু জানান, ফাতেমা শশুর বাড়ির জ্বালা যন্ত্রণায় অতিষ্ট তাই সে শশুর বাড়ি থেকে পালিয়ে যাবে এমন খবর পেয়ে ফাতেমারা বাবা বাঘা থানা পুলিশের সহায়তায় তার মেয়েকে নিয়ে গেছে। তবে কোন প্রকার লিখিত দেয়নি।