আজ ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি:
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ভূমি তদন্তে অজুহাতে অফিসেই ঘুমাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। গত ৫ নভেম্বর উপজেলার গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন সহকারী কর্মকর্তা (ভূমি) মোঃ কামাল হোসেন অফিস চলাকালীন সময়ে তার কক্ষে তালা ঝুলিয়ে অফিসের দ্বিতীয় তলার বিশ্রামাগারে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে এমন দৃশ্যই সাংবাদিকদের ক্যামেরায় ধারণ করা হয়েছে। একদিকে অসাধু ওই কর্মকর্তা নাক ডেকে ঘুমাতে দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে কর্মকর্তার কক্ষে তালা ঝুলছে। এতে সেবা নিতে আসা গ্রহীতারা অফিসে ভীড় জমাচ্ছে। কেউ কেউ বিরক্ত হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। এ কর্মকর্তার কাছে আসা গ্রহীতারা তার খোজ করলে অফিসে কর্মরত কর্মচারিরা জানায় স্যার বাইরে তদন্ত করতে গেছে। এ ঘটনা শুধু আজকেই নয় এমন দৃশ্য প্রতিনিয়তই দেখা যায় বলে জানান অফিসে সেবা নিতে আসা গ্রহীতারা।
এ অফিসে শুধু এ নাটকীয় নয়। চলছে রমরমা ঘুষ বাণিজ্য। ঘুষ ছাড়া প্রস্তাব মেলে না নামজারির। জমির খাজনা দিতে আসলেও গুনতে হয় অতিরিক্ত টাকা। ঘুষ ছাড়া সঠিক তদন্ত করে না বলেও অভিযোগ রয়েছে এক কর্মচারির বিরুদ্ধে। ভূমি সংক্রান্ত কোনো তথ্য নিতে আসলেও দিতে হয় টাকা। অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাহিদা মতো টাকা দিতে না চাইলেই বিড়ম্বনায় পড়তে হয় তাদের। বেশি হয়রানির শিকার হতে হয় নামজারির প্রস্তাবে। আর ‘খ’ তফসিল ভুক্ত নামজারির প্রস্তাব নিতে হাজার টাকা থেকে শুরু করে লাখেও পৌছায়। এসকল ঘুষ বাণিজ্য থেকে মুক্তি চায় এ অফিসে আসা সেবাগ্রহীতারা।
ভুক্তভোগী পাচাইখা এলাকার শাহজাহান মিয়া বলেন, নামজারি প্রস্তাবের জন্য সকাল ১১ টার সময় ভূমি অফিসে এসে ভূমি কর্মকর্তা কামাল হোসেনকে পায়নি। পরে এ অফিসের ওমেদার বাবুল মিয়া বলেন স্যার তদন্তে গেছে। আসতে দেরি হবে। দুপুর ১টার সময় সাংবাদিকরা এসে কামাল হোসেনকে অফিসের ২তলার বিশ্রামের কক্ষ থেকে বের করে আনে।
ভুক্তভোগী রাজিব বলেন, ১১টার সময় অফিসে এসে নায়েব কামালকে পাইনি। অফিসের লোকজনকে জিজ্ঞেস করলে তারা বলেন, নায়েব স্যার তদন্তে গেছে। কখন আসবে বলতে পারিনা।
নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক আরেক ভুক্তভোগী জানায়, এ নায়েব প্রায় সময়ই তদন্তের কথা বলে কইযে যায় আসার খবর আর থাকেনা। অফিসের লোকজনকে বললে, বলে তদন্ত গেছে। কোনো দিন বলে নারায়ণগঞ্জ ডিসি অফিসে গেছে। আমরা এ ভোগান্তি থেকে মুক্তি চাই।
ভুক্তভোগী আলামিন মিয়া বলেন, আমার জমির ফাইল খারিজের জন্য ইউনিয়ন ভূমি অফিসে আসলে দখল দেখতে তদন্তে যায় উম্মেদার বাবুল মিয়া। সে সরেজমিনে জমিতে না গিয়ে চলে আসে। পরে জমি আমার দখলে নাই বলে মন্তব্য করেন। পরে সেই ফাইল নামঞ্জুর করে বাতিল করেন।
ভুক্তভোগী জাঙ্গীর এলাকার ফরিদা বেগম জানান, গোলাকান্দাইল মৌজায় আমার ৫ শতাংশ সম্পত্তি নামজারির জন্য উপজেলা সহকারী কমিশনার বরাবর আবেদন করলে তা গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন ভূমি অফিসে প্রস্তাবের জন্য আসে। আমার কাগজ পত্র সঠিক থাকার পরও টাকা না দেওয়ায় নামজারির কেইসটি বাতিল করে প্রতিবেদন পাঠায়।
ইসলাম বাগ কালী এলাকার ভুক্তভোগী বাদশা মিয়া জানান, গত ২২ নভেম্বর নামজারির জন্য উপজেলা ভুমি অফিসে আবেদন করি। পরে গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন ভূমি অফিসে আমার কেইস হস্তান্তর করা হয়। সব কাগজপত্র ঠিক থাকারপরও চাহিদা মতো টাকা না দেওয়ায় উপজেলা ভূমি অফিসে প্রস্তাব পাঠায়নি।
এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সীমন সরকার বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত না। তবে এরকম ঘটনা যদি ঘটে থাকে সুষ্ঠু তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো।