আজ ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বলোতো তোমার বিদ্যালয়ের নাম কি? কোন রকম দ্বিধাদ্বন্ড না রেখে কোমল মতি শিশু শিক্ষার্থীরা উত্তর দেয় নটীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রশ্নটির সাবলিল উত্তর দিতে পেরেছে এ জন্য হয়তো তারা আনন্দিত বোধ করে। বুঝতে শিখে গেলে জীবনের প্রথম বিদ্যাপিঠের নেতিবাচক ভাবার্থ সম্বলিত নামটি মুখে উচ্চারণ করতে দ্বিধায় পড়ে যেতে পারে তারা। এরকম চোরমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভন্ডগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ধুতিচোরা, মাংগীরপাড় কিংবা গলাকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো অনেক শ্রুতিকটু ও নেতিবাচক অর্থ দাঁড়ায় এমন বিদ্যালয়ের সংখ্যা অসংখ্য। তথ্যমতে, দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৫৬৫টি। শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২ কোটি ৫ লাখ ৪৬ হাজার ৯১।
শ্রুতিকটু ও শরীর ঘিন ঘিন করা শব্দের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোর নাম পরিবর্তন করার কাজটি সাধ্যের মধ্যে ছিল। একবিংশ শতাব্দির নতুন প্রজন্মের গোপন অভিলাষ ছিল, দাবি ছিল এটি পরিবর্তন হোক। দায়িত্ব প্রাপ্তরা দারুন ব্যস্ত থাকায় হয়তো চিন্তাও করেনি। সেটি চিন্তার রেখায় এনে গভীর উপলব্ধিতে অনুভবে নিয়ে বাস্তবায়ন করে দেখালেন রংপুরের সাবেক ডিসি, বর্তমান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সচিব ফরিদ আহাম্মদ স্যার। তাঁর এই কাজটি যুগান্তকারী এবং অবিস্মরনীয় উপমাময় সৃষ্টি হয়ে খুব নিরবে রয়ে যাবে, সময় থেকে সময়ে।
সম্প্রতি শ্রুতিকটু ও নেতিবাচক ভাবার্থ সম্বলিত অর্থ দাঁড়ায় এমন ২৪৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। রাখা হয়েছে নান্দনিক ও শ্রুতিমধুর শব্দের নতুন নাম। যেমন, রাজশাহী জেলার তানোর উপজেলার নটীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল উপজেলার ভন্ডগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে বর্ণমালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় করা হয়েছে। এসব বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে ৩ এপ্রিল বুধবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামকরণ ও বিদ্যমান নাম পরিবর্তন নীতিমালা, ২০২৩ এর নীতি ৪ (ক) ও ৫ অনুযায়ী ২৪৭টি বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করা হলো। আমরা বিশ্বাস করি, আগামীতে অবশিষ্টগুলো হবে।
ফরিদ আহাম্মদ স্যার ২০১২ হতে জুন, ২০১৫ সাল পর্যন্ত রংপুরের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সেই সময় তথ্যের প্রয়োজনে তাঁর কাছে বহুবার যেতে হয়েছিল। আমি তাকে ব্যতিক্রমি ব্যক্তি হিসেবে জানতাম। যা বলতেন করে দেখাতেন। তাকে পারঙ্গম ডিসি নাম দেয়া হয়েছিল। যে কোন অনুষ্ঠানে নির্ধারিত সময়ের আগেই উপস্থিত হতেন। তাঁর সময় সচেতনতার আলোচনা এখনো চলে আমাদের মাঝে। ২০২২ সালের ৩০ অক্টোবর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করার সংবাদে আমরা ভেবে নিয়েছিলাম এবার একটি ব্যতিক্রমি কিছু দেখতে পারবে।
ফরিদ আহাম্মদ স্যার গত বছর ল্যাপটপ বিতরণের একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে রংপুর এসেছিলেন। তখন কথা হয়েছিল। তিনি সাংবাদিকদের জানিয়ে ছিলেন, শ্রæতিকটু ও নেতিবাচক ভাবার্থ সম্বলিত অর্থ দাঁড়ায় এমন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোর নাম অল্প দিনের মধ্যে পরিবর্তন করা হবে। অবশেষে শুরুও হয়ে গেল। এই যে, নটীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন হয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হয়ে গেল অথবা ভন্ডগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন হয়ে বর্ণমালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় করা হলো, দূর থেকে, সহজ চোখে সহজ মনে হলেও এটি মোটেও সহজ ছিল না। প্রজ্ঞাপন জারি করা, নামগুলো সংগ্রহ করা, অনুমোদন এবং বাস্তবায়ন করার বিষয়গুলো ছিল জঠিলতর। সবকিছু মেনে নিয়ে, কষ্টকে উপেক্ষা করে, ফরিদ আহাম্মদ স্যার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে শ্রুতিকটু এবং অনেকাংশে অশ্লীল শব্দের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোর নাম পরিবর্তনে যে বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন, সেটি অবশ্যই অতুলনীয়, সূদুর প্রসারী ফলাফলের জন্য সমৃদ্ধ। এতে করে আগামী প্রজন্ম খুব উপকৃত হবে। স্যার, রংপুরবাসী হিসেবে এজন্য আমরা গর্বিত আপনার জন্য। কারণ আপনি আমাদের একজন ছিলেন।
সাংবাদিক ও লেখক।
মহিউদ্দিন মখদুমী