আজ ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
মাসুমা জাহান,বরিশাল ব্যুরো:
পটুয়াখালী সদর উপজেলার বাসিন্দা রাজা মিয়া গাজী ও তাসলিমা বেগম দম্পতির সন্তান ফেরদৌসি সুমাইয়া (১৮) ও মোহাম্মদ আলী (১২)। ২০২১ সালের ৩ আগস্ট রাতে চাচাতো ভাইয়ের দেওয়া অ্যাসিডে ঝলসে যায় সুমাইয়া ও তার ছোট ভাই মোহাম্মদ আলী।স্থানীয়ভাবে সুমাইয়া চিকিৎসা নিয়ে ভালো না হওয়ায় ভারতে গিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসায় টাকা শেষ হয়ে যাওয়ার অজুহাতে মেয়ে আর স্ত্রী রেখে দেশে চলে আসেন সুমাইয়ার বাবা রাজা মিয়া গাজী।সম্প্রতি সুমাইয়ার মা’ও মেয়েকে একা রেখে দেশে চলে এসেছেন।
এদিকে ভারতে সুমাইয়া অর্থের অভাবে ওষুধ কিনে খেতে পারছেন না।সুমাইয়ার কান্নাজড়িত আকুতির এমন একটি ভিডিও বৃহস্পতিবার পটুয়াখালী পুলিশ সুপারের হোয়াটসআপে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ সুপার মো. সাইদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা যায়, ২০২১ সালের ৩ আগস্ট রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে জেলার সদর উপজেলার মাদারবুনিয়া ইউনিয়নের গেরাখালী গ্রামে ঘুমন্ত সুমাইয়া ও তার ছোট ভাই মোহাম্মদ আলীর (১২) ওপর দুর্বৃত্তরা অ্যাসিড নিক্ষেপ করে। এতে ঝলসে যায় দুই ভাই-বোনের শরীর। সুমাইয়া তখন আউলিয়াপুর মহিলা মাদরাসায় হেফজ বিভাগের ছাত্রী ছিলেন এবং ভাই মোহাম্মদ আলী একটি মাদরাসায় কোরআন শরীফ শিখছিলেন।
সুমাইয়া দাবি করেন, তার আপন চাচাতো ভাই তাকে অ্যাসিড নিক্ষেপ করেন এবং তার বাবা ভাতিজাকে বাঁচানোর জন্য তাকে অসহযোগিতা করছেন।
সুমাইয়া বলেন, ‘আমার আপন চাচাতো ভাই আমার গায়ে অ্যাসিড মেরেছে। আমার বাবা ও মা আমাকে নিয়ে ভারতের ভেলরে চিকিৎসা করাতে আনলেও টাকা শেষ হয়ে যাওয়ায় প্রথমে বাবা দেশের বাড়িতে চলে যান এবং গত ২-৩ দিন আগে মা’ও চলে যান। এখন আমি ভেলরে একা পড়ে আছি। অর্থের অভাবে ওষুধ কিনে খেতে না পারায় আমার মুখ ফুলে উঠেছে এবং প্রচণ্ড যন্ত্রণা করছে। আমি আমার চাচাতো ভাইয়ের বিরুদ্ধে কথা বলায় বাবা আমার ওপর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। ভাতিজাকে বাঁচানোর জন্য বাবা আমাকে অসহযোগিতা করছেন এবং ভালোভাবে চিকিৎসাও করাচ্ছেন না। আমাকে নিয়ে আমার বাবা একশ’ বার সালিশ বৈঠকে বসেছেন। এতে আমি নানাভাবে প্রতারিত ও নির্যাতিত হয়েছি। এমনকি আমার বাবার কারণে আমার মামলাটিও এখন ধ্বংস হওয়ার পথে এবং তার (বাবা) কারণে আসামিরা সবাই এখন জামিন পেয়েছে।’
সুমাইয়া আকুতি জানিয়ে বলেন, ‘আপনারা আমার চিকিৎসা খরচ যোগান দিয়ে আমাকে একটু বাঁচান। আমি আর অ্যাসিডের পোড়া যন্ত্রণা সহ্য করতে পারছি না। প্লিজ, আপনারা আমাকে বাঁচান।’
এ প্রসঙ্গে সুমাইয়ার বাবা রাজা মিয়া গাজী বলেন, ‘আমি আইছি এক মাস হইছে, বাড়িতে ধান পান আছে মাড়াই করা লাগবে এই জন্য। আওয়ার পর ২০ হাজার টাকাও পাঠাইছিলাম, আবার পাঠামু। তয় মেয়ের মায় আইছে ক্যান তা জানি না।’
আপনার মেয়ের গায়ে অ্যাসিড নিক্ষেপকারীর বিচার চান কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এসিড যে মারছে তিনি আমার ভাতিজা। মিল মিমাংসার জন্য এই পর্যন্ত ৭ লাখ টাকা দেছে যাতে মামলা না হয়। এহন টাকা মেয়ের একাউন্টে, সে ফালাইয়া দেবে না চিকিৎসা করবে তা মেয়ে আর মেয়ের মা জানে। তারা (ভাতিজা) টাকা দেবে, বিচারও পাইবে তাইলে কি হয়? আমি জানি না মেয়ের মা ও মেয়ে জানে।’
সুমাইয়া ২০২১ এইচএসসি পাস করে এবং বর্তমানে পটুয়াখালী সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী।
এদিকে এ ঘটনার পর ২০২১ সালের ২৮ আগস্ট সুমাইয়ার খালা রেবেকা বেগম বাদী হয়ে ওই এলাকার এনায়েত গাজীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৪-৫ জনকে আসামি করে পটুয়াখালী সদর থানায় মামলা করেন। পরবর্তীতে তদন্ত শেষে পুলিশ ২০২২ সালের ১৫ অক্টোবর এনায়েত গাজী (৩০), রাসেল গাজী (৩০) ও রাসেলের স্ত্রী মারিয়া বেগমের (২০) নামে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে।
এ ব্যাপারে পটুয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘মামলার তদন্ত শেষে তিনজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে এবং মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে। মেয়েটি আমাকে যে বার্তাটি দিয়েছে সেটি আমরা মানবিক দৃষ্টিতে দেখেছি এবং সহযোগিতার জন্য বিভিন্ন এনজিওসহ মানবিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে কথা বলেছি। পটুয়াখালীর পুলিশ প্রশাসন থেকেও মেয়েটিকে চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা করা হবে। মেয়েটি দ্রুত সুস্থ হয়ে ফিরে আসুক এটাই কাম্য।