আজ ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
দেবহাটা মুক্ত দিবস মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিগাঁথা ৬ ডিসেম্বর যথাযথভাবে পালিত!
মোঃ রিয়াজুল ইসলাম, (আলম)সাতক্ষীরা সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলায় ঐতিহাসিক ৬ ডিসেম্বর, দেবহাটা মুক্ত দিবস। মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিগাঁথা এই দিনে দেবহাটা উপজেলা পাক হানাদার মুক্ত হয়েছিলো, উড়েছিলো বিজয়ের পতাকা। পাক হানাদার মুক্ত হয়ে এই দিনে দেবহাটার মানুষ খুজে পেয়েছিল দীর্ঘদিনের যুদ্ধ বিজয়ের আনন্দ। মুক্তিযুদ্ধের সেই ঐতিহাসিক দিনগুলোর বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, সমগ্র দেবহাটা ছিল ৯ নং সেক্টরের অর্ন্তভুক্ত। এই ৯ নং সেক্টরের আওতায় ৩ টি সাব-সেক্টর গঠন করা হয়। তার মধ্যে প্রথম সেক্টরটি ছিল শমসের নগর। যার নেতৃত্বে ছিলেন ক্যাপ্টেন নুরুল হুদা। দ্বিতীয়টি হেঙ্গলগজ্ঞ ও তৃতীয়টি ছিল টাকী। যার নেতৃত্বে ছিলেন মরহুম ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাষ্টার। বাংলাদেশের ১১ টি সেক্টরের মধ্যে ৯ নং সেক্টরটি ছিল সর্ববৃহৎ। ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাষ্টারের উদ্যোগেই ভারতের টাকীতে গড়ে তোলা হয় ৯ নং সেক্টর। সেজন্য তাকে ৯ নং সেক্টরের প্রতিষ্টাতা ও সাব সেক্টর কমান্ডারের খেতাব দেয়া হয়। সমগ্র দেবহাটা থানা ৯ নং সেক্টরের অধীনে ছিল। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর জলিল। শাহজাহান মাষ্টারের নেতৃত্বেই এই অঞ্চলের যুবকেরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে। তিনি দেশ মাতৃকার টানে এলাকার যুবকদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনের প্রেরনা যুগিয়েছিলেন। দেবহাটা এলাকায় টাউনশ্রীপুর ফুটবল মাঠে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাক সেনাদের প্রচন্ড যুদ্ধ হয়। এছাড়া ভাতশালা সহ বিভিন্ন যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন মরহুম ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাষ্টার। ভাতশালা যুদ্ধের শেষের দিকে হঠাৎ একটি বুলেট এসে মুক্তিযোদ্ধা গোলজারের মাথায় লাগে। সেখানেই তিনি নিহত হন। একপর্যায়ে টাউনশ্রীপুরের সেনা ঘাটির পতন হয়। তখন প্রধান সেনাপতি এম.এ জি ওসমানী, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহম্মেদ ও সেক্টর কমান্ডার এম.এ জলিল সকলে মিলে ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাষ্টারকে নিয়ে বিজয় উল্লাস করেন। এখান থেকে পাক সেনারা যাওয়ার সময় শাহজাহান মাষ্টারের বাড়ি কেরোসিন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। এরপরে অক্টোবর মাসে খান সেনারা খাঁনজিয়া ক্যাম্প ছেড়ে পলায়ন করে। তারা যাওয়ার সময় ঐ এলাকায় এ.পি মাইন পুতে রেখে যায়। ঐ মাইনগুলো অপসারন করতে যেয়ে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ওহাব শহীদ হন। এভাবে দেবহাটা উপজেলা পাক হানাদার মুক্ত হয় ও ওঠে বিজয়ের পতাকা। সেই দিনটিকে স্মরন করে দেবহাটা উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে বর্নাঢ্য র্যালী ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সকাল সাড়ে ১০ টায় র্যালীটি উপজেলার প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন শেষে উপজেলা মুক্ত মঞ্চে এসে এক আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী। প্রধান অতিথি ছিলেন দেবহাটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ¦ মুজিবর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন দেবহাটা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ইয়াছিন আলী। এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দেবহাটা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা অধীর কুমার গাইন, দেবহাটা ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী ইদ্রিস, দেবহাটা থানার এসআই শফিকুল ইসলাম, দেবহাটা উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক আনোয়ারুল হক, সাবেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ, উপজেলা আইসিটি কর্মকর্তা ইমরান হোসেন প্রমুখ। এসময় বক্তারা মহান মুক্তিযুদ্ধের সেই স্মৃতি স্মরন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি সুখী সমৃদ্ধশালী দেশ গঠনে সকলকে আহবান জানান