আজ ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
মাসুমা জাহান,বরিশাল ব্যুরো
আজও অরক্ষিত বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের বাড়ি
স্বাধীনতার ৫২ বছর পেরিয়ে গেছে।তবে আজও সংস্কার ও সংরক্ষণ করা হয়নি বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের পৈতৃক বাড়ি।সন্ধ্যা নদীর অব্যাহত ভাঙনের কারণে হুমকিতে তার শেষ স্মৃতিচিহ্নটুকু।বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার রহিমগঞ্জ গ্ৰামে বাড়িটি অবস্থিত।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,১৯৪৯ সালের ৭ মার্চ বাবুগঞ্জ উপজেলার আগরপুর ইউনিয়নের (বর্তমানে জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়ন) রহিমগঞ্জ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর।তার বাবা মৌলভী আব্দুল মোতালেব হাওলাদার। তিনি ১৯৬৪ সালে মুলাদী মাহবুদজান উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন।পরে বরিশাল বিএম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ১৯৬৭ সালে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে (কাকুলে) জেন্টেলম্যান ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর।
১৯৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জের নবাবগঞ্জ মহানন্দা নদীর দক্ষিণ তীরে রেহাইচর এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর। পরে তার মরদেহ সেখানের ঐতিহাসিক সোনামসজিদ প্রাঙ্গণে সমাহিত করা হয়।
রহিমগঞ্জ গ্ৰামে বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের পৈতৃক ভিটার পাশেই নিজ বাড়িতে বসবাস করেন তার চাচাতো ভাই হারুন অর রশিদ হাওলাদার।তিনি বলেন, ‘দেশের জন্য প্রাণ দেওয়া জাতির এই বীরসন্তানের স্মৃতিবিজড়িত বসতভিটা নদীভাঙন ও অযত্ন-অবহেলায় রয়েছে।অতি সত্তর সরকারি কোনো পদক্ষেপ না নিলে অচিরেই বিলীন হয়ে যাবে তার স্মৃতিচিহ্নটুকু।
ক্ষোভ প্রকাশ করে হারুন অর রশিদ বলেন,‘জাতির এই বীরসন্তানের জন্মভূমি এতটাই অবহেলিত যে রাস্তা পর্যন্ত নেই। এজন্য মানুষ তার বসতভিটা দেখতে আসতে পারে না। এমনকি দাদার বাড়িটি যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে। বাড়িটি সংস্কারের জন্য সরকারের কাছে একাধিকবার আবেদন করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি।
২০০৮ সালে বরিশাল জেলা পরিষদের উদ্যোগে ৪৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে তার বাড়ির সামনে ‘বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর গ্ৰন্থাগর ও স্মৃতি জাদুঘর’ নির্মাণ করা হয়।সেটিও আজ অযত্ন-অবহেলায় জর্জরিত।সেখানে দর্শনার্থীদের জন্য বসার কোনো ব্যবস্থা নেই। বিভিন্ন স্থানে ভবনের পলেস্তারা খসে পড়ছে।নেই পানির লাইন।বাথরুমের অবস্থাও খুব ভালো নয়।
বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের নামে একটি স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।কিন্তু কলেজটি আজও উন্নয়নের মুখ দেখেনি।২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত জরাজীর্ণ টিনের ছাউনির শ্রেণিকক্ষে চলছে পাঠদান।
তবে গ্ৰামবাসী ও পরিবারের লোকজনের দাবিতে এ বীরসন্তানের নিজ গ্রামের নাম ‘আগরপুর ইউনিয়ন’ পরিবর্তন করে ‘জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়ন’ করা হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের স্বরূপনগরে তার নামে কলেজের নামকরণ করা হয়েছে। ঝালকাঠি জেলা স্টেডিয়ামের নামকরণ করা হয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীরের নামে।
বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর কলেজের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ের প্রভাষক সোয়েব আহমেদ বলেন, ‘জাতির এ বীরসন্তানের নামে নির্মিত কলেজটি দীর্ঘদিন ধরেই উন্নয়ন বঞ্চিত।কলেজের উন্নয়নে দ্রুত সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।পাশাপাশি তার বসতভিটা ও জাদুঘরটি সংরক্ষণের জন্য জোর দাবি জানাই।
একই কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এত নামকরা একজন মহান ব্যক্তির নামে কলেজ প্রতিষ্ঠার ১৪ বছরেও কোনো ভবন নির্মাণ করা হয়নি। ভবন নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। জরাজীর্ণ ভবনে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে আমাদের।
বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর গ্ৰন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরের কেয়ারটেকার সালাউদ্দিন আহমেদ হাওলাদার।তিনি বলেন, ‘আগে লোকজন জাদুঘর দেখতে আসতো। কিন্তু বর্তমানে এখানে আসার রাস্তা ও জাদুঘরের দুরবস্থার কারণে লোকজনের তেমন একটা আনাগোনা নেই। জরুরি ভিত্তিতে রাস্তাঘাট ও জাদুঘরটি সংস্কার করা প্রয়োজন।
স্থানীয় বীরমুক্তিযোদ্ধা এ এম জি কবির ভুলু বলেন, ‘বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের বাড়িটি এভাবে অরক্ষিত-অবহেলিত থাকবে তা কিছুতেই মানা যায় না। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে জোর দাবি জানাই, যেন তার বাড়িটি অচিরেই সংস্কার করা হয়।
এ বিষয়ে বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত ফাতিমা বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। বরাদ্দ এলেই বাড়িটির সংস্কার কাজ শুরু হবে।
বরিশাল জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আগে নদীভাঙনের হাত থেকে বাড়িটি রক্ষা করতে হবে। তারপর সংস্কার করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।